রাজধানী দিল্লির কৃষিভবনে টেনে-হিঁচড়ে নিগ্রহের পর দিল্লি পুলিশ লাইনে আটক। দু'ঘণ্টা পর ছাড়া পেয়েই শাহর পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্ত। অভিষেক বলেন, 'যাঁরা বঞ্চিত, মন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন না বলে জানিয়েছেন। উনি শুধু জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। ছ'টার আগেই আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু, মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দেখা না-করেই পালিয়ে যান। গরিব মানুষকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছেন মন্ত্রী। বাংলার মন্ত্রীদের টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। আজকের দিন ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে কালিমালিপ্ত হয়ে থাকবে। বাংলার মানুষ এর জবাব দেবে।'
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পাশাপাশি, আগামী দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন অভিষেক। তিনি বলেন, 'আজকের ঘটনার জেরে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লেখাটা রাজ্যপালের দায়িত্ব। আমরা পরশুদিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চাইব। ৫০ লক্ষ চিঠি রাজভবনে নিয়ে যাব। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তারপর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।' দুপুর তিনটের সময় রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হবে বলেই জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও দুই লক্ষ মানুষকে নিয়ে দিল্লির বুকে সভা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
দিল্লিতে বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে আসা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের হেনস্তার প্রতিবাদে সরব হন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল সাইটে তিনি ক্ষোভ উগরে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, 'আজ গণতন্ত্রের জন্য একটি অন্ধকার, অশুভ দিন। এই দিন বিজেপি বাংলার জনগণের প্রতি তাদের ঘৃণা, দরিদ্রদের অধিকারের প্রতি তাদের অবজ্ঞা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিসর্জন প্রকাশ করেছে। প্রথমত, তারা নির্মমভাবে বাংলার দরিদ্রদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তহবিল আটকে রেখেছে। আর, যখন আমাদের প্রতিনিধিদল দিল্লিতে পৌঁছেছে, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছে, আমাদের জনগণের দুর্দশার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞবদ্ধ, সেই সময় তাঁদের সঙ্গে নির্মম আচরণ করা হয়েছে- প্রথমে রাজঘাটে এবং তারপরে কৃষি ভবনে।'
আরও পড়ুন- কৃষিভবন থেকে অভিষেকদের চ্যাংদোলা করে তুলে আটক, দু’ঘণ্টা পর দিল্লি পুলিশলাইন থেকে মুক্তি
দিল্লি পুলিশের তীব্র নিন্দা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, 'দিল্লি পুলিশ, বিজেপির শক্তিশালী হাত হিসেবে কাজ করছে। আমাদের প্রতিনিধিদের নির্লজ্জভাবে হেনস্তা করেছে। তাঁদেরকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ অপরাধীদের মত তাঁদের পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কারণ, তাঁরা ক্ষমতার কাছে সত্য কথা বলার সাহস দেখিয়েছে। তাদের (কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি) ঔদ্ধত্যের কোনও সীমা নেই। অহংকার তাদের অন্ধ করে দিয়েছে। বাংলার কণ্ঠস্বর দমন করতে তারা এখন সব সীমা অতিক্রম করেছে! কিন্তু, আমরা ভয় করব না ভয় করব না, দু'বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না।'
তবে যে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের যাবতীয় অভিযোগ, সেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাত ৮টা ৩০ পর্যন্ত তিনি তৃণমূলের প্রতিনিধিদের জন্য দফতরেই ছিলেন। মন্ত্রী অভিযোগ, তৃণমূল নেতারা দেখা করার বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছিলেন। যা তাঁর দফতরের নিয়মের বিরোধী। তাই তিনি দেখা করেননি।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পাশেই দাঁড়ান। তিনি বলেন, 'আটক করেছিল। পার্সোনাল বন্ডে ছেড়েও দিয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধে নন। ওঁর (অভিষেকের) সঙ্গে যা করা হয়েছে, ঠিক করা হয়েছে। পাঁচ জনকে তো সময় দিয়েছিলেন। কেন ৪০ জনকে নিয়ে গেছেন?'