Abhishek Banerjee Virtual Meeting: ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে 'শুভেন্দুগড়ে' নিয়ে চিন্তিত অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। দলীয় কর্মীদের কড়া নির্দেশ দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক গতকাল দলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরে নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার জন্য কাঁথি আসন হেরেছি। যদি সর্বশক্তি প্রয়োগ করতাম তাহলে জিততে পারতাম।” পাশাপাশি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে কমপক্ষে ১২টি আসন জিততে হবে বলেও জেলার নেতাদের নির্দেশ অভিষেকের। একই সঙ্গে তিনি মালদা জেলায় দলের খারাপ পারফরমেন্সের জন্য উষ্মা প্রকাশ করেন। মালদা'তে দলের 'গোষ্ঠী কোন্দল' নিয়ে কড়া বার্তা দেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন কমান্ড।
ভোটার তালিকায় 'ভূত' নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ভুয়ো ভোটার কাণ্ডে কেন্দ্রকে বেনজির তোপ অভিষেকের। পাখির চোখ ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন, তার আগেই ভুয়ো ভোটার নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে হাজির ছিলেন দলের বিধায়ক, সাংসদ জেলা সভাধিপতি সহ তৃণমূলের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার প্রতিনিধি।
২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভুয়ো ভোটার খুঁজতে আসরে অভিষেক। সাংগাঠনিক বৈঠকে ৫ দিনের মধ্যে জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ। রাজ্যের বাইরে যারা থাকেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কমিটি তৈরির ক্ষেত্রে সাংসদ-বিধায়কদের সর্বসম্মত ভাবে কমিটি তৈরির নির্দেশ।
এদিনের বৈঠকে থেকে অভিষেক স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন 'এই মুহূর্তে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করা'। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কিছু এজেন্সি ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার ঢোকানোর কাজ করছেন বলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অভিষেক।
২১ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে ব্লক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। দলের তরফে ইলেক্টোরাল রোল সুপারভাইজার নিয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। জেলা স্তর, ব্লক স্তর, পঞ্চায়েত স্তর, বুথ স্তর পর্যন্ত কমিটি তৈরি হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা পরীক্ষার কাজ চলবে। গোটা প্রক্রিয়ার দায়িত্ব সামলাবে আইপ্যাক।
পাশাপাশি আইপ্যাকের নাম করে টাকা তোলার অভিযোগ নিয়ে এবার কড়া নির্দেশ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের। পদ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে আমার নাম করে বা আইপ্যাকের নাম করে কোন টাকা তোলা যাবেনা, সাফ বার্তা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমন কোন বিষয় সামনে এলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড।
অভিষেক এদিনের বৈঠকে বিভিন্ন জেলার নেতাদের এমন এলাকায় নজর রাখার নির্দেশও দিয়েছেন যেখানে তৃণমূল ভালো পারফর্ম করছে না। এদিনের সভা থেকে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করার সময়, অভিষেক বলেন যে যদি কেউ তার সম্পর্কে কাউকে ভুল তথ্য দেয়, তাহলে 8142681426 নম্বরে কল করে অভিযোগ জানানো যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় শাসক দল সামগ্রিকভাবে ভালো ফলাফল করেছে। ২০১৯ সালে ১৮ সাংসদের নিরিখে তা বেড়ে ২০২৪ সালে ২৯-এ দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর এবং মালদায় অপ্রত্যাশিত ফলাফলের জন্য এবার দলীয় নেতৃত্বকে বড় নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি এবং তমলুক আসন বিজেপির দখলে। মালদহে বিজেপি একটি এবং কংগ্রেস একটি আসন পেয়েছে। 'অত্যন্ত বিচলিত' দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ওই দুই জেলায় খারাপ ফলাফলের জন্য নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করেছেন। এ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেছেন যে, 'নিজেদের মধ্যে লড়াই করে আপনারা অন্য পক্ষকে সুযোগ করে দিয়েছেন। বিজেপি এবং কংগ্রেস মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে। আমরা যদি আরও একটু চেষ্টা করতাম তাহলে কাঁথিতে একটি আসন জিততে পারতাম'। সূত্রের খবর অনুযায়ী, অভিষেক মালদায় খারাপ ফলাফলের জন্য জেলা নেতৃত্ব এবং ব্লক নেতৃত্বকে দায়ি করেছেন।
গতকালের বৈঠক থেকে মালদার জেলা নেতাদের উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, 'আপনি মন্ত্রী হয়েছেন, পদ পেয়েছেন, কিন্তু ভোটের নিরিখে পিছিয়ে আছেন। যুদ্ধের সময় যে ব্যক্তি তার মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে তৃণমূল কর্মী নয়। পার্টি আমাদের কাছে মায়ের মতো। এছাড়াও, দক্ষিণ দিনাজপুরের জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট আসনও জিততে পারেনি তৃণমূল। দলের 'সেকেন্ড -ইন কমান্ড' ওই জেলা নেতাদের সমালোচনা করেছেন। তমলুক, কাঁথি, মালদার ফলাফল সম্পর্কে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে এই জেলাগুলিতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। আমি শীঘ্রই একটা মিটিং ডাকবো। এবার আমাদের আরও জোরালোভাবে লড়াই করতে হবে। অভিষেক বলেন, সাধারণ মানুষকে আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। বিরোধীরা এর সুযোগ নিয়েছে। এখনও সময় আছে, জনসাধারণের কাছে যান। তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে লড়াই করছে তা ব্যাখ্যা করতে হবে। এদিন অভিষেক দলের নেতাদের সতর্ক করে বলেন, আমাদের নেতারা কী করছেন, সে সম্পর্কে আমি সবকিছু জানি। কে দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, কে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টা করছে, কে দলের প্রতি অবিচার করছে, সবকিছুই আমার জানা। জনসাধারণের মধ্যে যান, শক্তিশালী জনসংযোগ গড়ে তুলুন'।