Advertisment

ভোট মিটতেই ১০ লক্ষ লোক নিয়ে দিল্লিতে জমায়েত-অবস্থান, মালদায় ঘোষণা অভিষেকের

'রাজ্যে বিজেপির সবচেয়ে বড় এজেন্ট অধীর চৌধুরি,' গণির গড়ে আঙুল তুললেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।

IE Bangla Web Desk এবং Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Abhishek 2

মালদার সুজাপুরে হাতিমারি মাঠের জনসভায় বক্তব্য রাখছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি।

বিজেপির সবচেয়ে বড় এজেন্ট অধীর চৌধুরি। কাজেই বাংলায় কংগ্রেস সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভালো। অধীর চৌধুরী বাংলায় শুভেন্দুর সুরেই কথা বলেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বিরোধী দল বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের সেটিং তত্ত্ব নিয়ে সোচ্চার হয়ে এভাবেই অভিযোগের আঙুল তুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। রবিবার দুপুরে মালদার সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হাতিমারি মাঠে তৃণমূলের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মৌসুম নুর, দলের জেলার সভাপতি আবদুর রহিম বক্সি, চেয়ারম্যান সমর মুখার্জি, রাজ্যের সেচ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। দুপুর একটা থেকে জনসভা শুরু হলেও বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ পৌঁছন অভিষেক। প্রায় ৩৫ মিনিট তিনি বক্তৃতা দেন।

Advertisment
publive-image

জনসভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমরা মিরজাফর নই, আমাদের মেরুদণ্ড সোজা। সুতরাং ইডি-সিবিআই যতই আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হোক না-কেন, তৃণমূলকে অপদস্থ করা যাবে না।  পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের চরম বোঝাপড়া চলছে। এখনও পর্যন্ত ওরা কেউ কারও বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিষয় নিয়ে এতটুকুও অভিযোগ করেনি। সবাই তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে আক্রমণ করছে। কিন্তু, তাতে কোনও লাভ নেই। যে উন্নয়ন সাধারণ মানুষের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি করেছেন, তাতে মানুষকে ভুল বোঝানো যাবে না। তাই আবারও বলি, আপনারা কানে শুনে নয়, চোখে দেখে ভোট দিন।'

publive-image

বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে একহাত নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি বলেন, 'আপনারা তো টিভির পর্দায় দেখেছেন যে টাকার বান্ডিল কে হাতে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যেখানে পরিষ্কার হয়ে গেল শুভেন্দু অধিকারী টাকা নিচ্ছে, সবাই দেখেছে টিভিতে। তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাদের দলের ওই নেতার বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নিলেন না। আসলে প্রধানমন্ত্রী মুখে বড় বড় কথা বলেন। ৯ বছরের রাজত্বে কেন্দ্রের মোদী সরকার সাধারণ মানুষের জন্য কোনও সুবিধা করে দিতে পারেননি। এরাজ্যে শুধু উন্নয়ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।'

publive-image

এদিন কংগ্রেসের সাংসদ অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি বলেন, 'বাংলায় অধীর চৌধুরী শুভেন্দু ও মোদির সুরে কথা বলছে। এখন বিজেপির সবচেয়ে বড় এজেন্ট অধীর চৌধুরী। তাই ওদেরকে বিশ্বাস করা যায় না। অথচ পাটনায় দিদির পাশেই বসেছিলেন রাহুল গান্ধী। বলেছিলেন, একজোট হয়ে লড়াই করার কথা। কিন্তু কোথায় কী! এখানে তো বিরোধীদের সবকিছুই হচ্ছে সেটিং-এর মাধ্যমে। কিছুদিন আগেই পাটনায় ১৬ দলের একজোট হয়ে বৈঠকের পর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে বিজেপির। তাই ওরা এখন কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তৃণমূলের মেরুদণ্ড সোজা। কাউকে ভয় পায় না। মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই চলবে।'

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি আরও বলেন, 'এতদিন কেন্দ্রে থেকেও মোদী সরকার মানুষের জন্য পাকা ছাদ করে দিতে পারেনি। কৃষকদের আয় ৩ গুণ বাড়াতে পারেনি। স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প কোথায় গেল? কিন্তু, বাংলার গ্যারেন্টার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মানুষ বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন। মহিলারা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন। সবুজ সাথী থেকে কন্যাশ্রী, মানুষ একাধিক প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে।'

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমি নব জোয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলাম। সেই দুই মাসের কর্মসূচি দেখে বিজেপির পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল। এত মানুষের ভিড় দেখে ঘাবড়ে গিয়েছে ওরা। আর, নব জোয়ার কর্মসূচি শেষ হতেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে নোটিশ করে আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। কিছু করতে পারেনি ওরা। খালি ভয় দেখাতেই জানে। তবে, এবারে মানুষ বুঝতে পেরেছে। ২০২৪ সালে বিজেপির দেশ থেকে যাওয়া এখন খালি সময়ের অপেক্ষা। কারণ, ইতিমধ্যে ওরা পাঁচটা রাজ্যের বিধানসভা ভোটে হেরেছে। আমাদের লড়াইটা সংবিধান রক্ষা করার বিরুদ্ধে। গত নয় বছরে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কোনওরকম ব্যবস্থা নিতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার।'

এদিন মালদার উন্নয়নের প্রসঙ্গে সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি বলেন, 'গত পাঁচ বছরে মালদার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে ২,৫০০ কোটি টাকা প্রকল্পে পিএইচই'র কাজ হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দফতরের সহযোগিতা নিয়ে মালদায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সার্বিক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। মালদা শুধু নয়, গোটা রাজ্যের উন্নয়নের দায়িত্ব তৃণমূলের সরকারের। যা করে দেখাচ্ছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।'

কেন্দ্রের মোদি সরকারের বকেয়া নিয়েও সুর চড়িয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি বলেন, 'গত দুই বছর ধরে ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। আবাস যোজনার টাকাও বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে গরিব মানুষের পেটের ভাত মারাটা উচিত নয়।' গরিবের অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই দিল্লিতে অবস্থান করার কথা জানিয়েছেন সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি বলেন, 'পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটে গেলে ১০ লক্ষ লোক নিয়ে দিল্লিতে জমায়েত এবং অবস্থান করব। দেখি ওরা কীভাবে এরাজ্যের গরিবের অধিকার আটকে রাখতে পারে!'

আরও পড়ুন- পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ফল খারাপ হলেই বন্ধ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার? কোন ‘তথ্যে’ আশঙ্কা দিলীপের?

এদিন পঞ্চায়েতের প্রার্থী প্রসঙ্গে সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি বলেন, 'আমি গত দুইমাস নব জোয়ার কর্মসূচির মাধ্যমে রাস্তায় সময় কাটিয়েছি। মানুষের জনমত সংগ্রহ করেছি। সাধারণ মানুষ তৃণমূলের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রার্থী হিসেব যাঁদের চেয়েছিলেন, তাঁদেরই করা হয়েছে। তাই আবারও বলি, ওঁরা যতই বলুক না-কেন, বিরোধীদের ফাঁদে পা দিবেন না। তৃণমূল সরকারের হাত শক্ত করুন। উন্নয়নের ধারা বজায় থাকবে। কোনও মানুষ উন্নয়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না।'

Meeting abhishek banerjee adhir choudhury
Advertisment