তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক চরমে। যা নিয়েই দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আদতে পরিণত হল কুস্তির আখড়ায়। দিনভর চলল চর্চা। নতুন বছরের প্রথম দিনে সরগরম রইল বঙ্গ রাজনীতি। এসবের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে গেলেন অভিষেক। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এখনও সেখানেই রয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটে তৃণমূল নেত্রীর বাড়িতে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই সেখানে পৌঁছেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
তৃণমূলে প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্বে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এক্ষেত্রে মমতা-অভিষেকের অবস্থান বিপরীত মেরুতে। এই প্রেক্ষাপটে প্রবীণ-নবীন বিতর্কে অভিষেক যেমন একাধিকবার মুখ খুলেছেন, তেমনই দলনেত্রীর সুরে সরব সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিমরা। সুব্রত বক্সি, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষরা মুখ খোলায় দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে যা আরও তীব্র হয়েছে। এতে দলের বিভাজন প্রকট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কী ঐক্যবদ্ধ তৃণমূলের হাল ধরতে মাঠে নামলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তাঁর বাড়িতে অভিষেকের যাওয়া যেন সেই বিতর্কে ইন্ধন জোগাচ্ছে।
আরও পড়ুন- ‘আমার ধারণা উনি পিছবেন না’, বছরের শুরুতেই ‘নাছোড়’ অভিষেককে বার্তা মমতার ‘দূত’ সুব্রতর
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলীয় সংগঠন ও সরকারের নানা কাজে সন্তুষ্ট নন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন কয়েক আগেই ঘনিষ্ঠ মহলে অভিষেক নাকি জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটে তিনি নিজেকে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে সীমাবদ্ধ রাখতে আগ্রহী। এরপরও দলনেত্রী সাংগঠনিকভাবে যে নির্দেশ দিবেন তাই তিনি পালন করবেন। তাহলে কী আগামী লোকসভার লড়াইয়ে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’কে সামনের সারিতে দেখা যাবে না? এই জল্পনা যখন মধ্যগগনে তখনই দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে অভিষেককে নিয়ে সোমবার সুব্রত বক্সীর মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়।
দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণে তৃণমূলের রাজ্যসভাপতি বলেছেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সর্বস্তরের ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করেন, নিশ্চিত ভাবে আমাদের ধারণা উনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে লড়াই করবেন উনি।'
আরও পড়ুন- মমতা ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীদের বেলাগাম তোপ কুণালের, নিশানায় প্রবীণ তৃণমূল সাংসদও
এরপরই সুব্রত বক্সির মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘রাজ্য সভাপতিকে সম্মান করি। কিন্তু তাঁর বাক্যগঠন নিয়ে আপত্তি রয়েছে। এটা কখনওই কাঙ্খিত নয়। অভিষেক লড়াইয়ের ময়দানেই রয়েছেন। আর তিনি যে কথা বলতে চান, তা শুনলে দলেরই মঙ্গল। এই ধরনের আলটপকা কথা বলে আসলে অভিষেকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা হয়েছে। যা দলের জন্য মোটেই ভাল সঙ্কেত নয়।’
এখানেই শেষ নয়। মমতার পক্ষে চালিয়ে খেলায় এ দিন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেন কুণাল। বলেন, 'অন্ধ আনুগত্য দেখানোর চেষ্টা করছেন।' শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির নেতারা মমতা-অভিষেককে 'চোর চোর' বলে টার্গেট করলেও তৃণমূলের মমতা ঘনিষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীদের একাংশ সোচ্চার হন না বলেও তোপ দাগেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। ফলে স্পষ্ট হয় তৃণমূলের টানাপোড়েন। তারপরই সকলকে চমকে দিয়ে সন্ধ্যায় কালীঘাটে মমতার বাড়িতে পৌঁছন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
আরও পড়ুন- বছর শুরুতেই বিস্ফোরক ফিরহাদ! চাকরি দুর্নীতি মেনে নিয়ে দায়ী করলেন কাদের?