পাঁচ বছর পর নিজের কাজের খেসারতের জন্য ভুল স্বীকার করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, কোচবিহারের মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি শনিবার মাথাভাঙার সভায় তাঁর ঘোষণা, 'এখন থেকে কোচবিহারের দায়িত্ব আমার।'
কিন্তু ২০১৮ সালে কী এমন করেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ? সেবছর পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক গন্ডগোল, সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন বিরোধী দলগুলি। ক্ষমতার টানাপোড়েন জোড়া-ফুলের অন্দরেও কিছু কম ছিল না। 'মাদার' ও 'যুব' তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। যার বেশিরভাগটাই কোচবিহার জেলায়।
গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের যুব সভাপতি ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বেই কাজ করতেন নিশীথ প্রামাণিক। তিনি ছিলেন কোচবিহার জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি। শোনা যায় অভিষেকের বিশ্বাভাজনও ছিলেন তিনি। সেবার ভোটে তৃণমূলের কোচবিহারের সভাপতি তথা প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে নিশীথ প্রামণিকের বিরোধ একাধিকবার জনসমক্ষে ধরা পড়েছিল।
অভিযোগ ওঠে, দলের নির্দেশ অমান্য করে শাসক দলের জেলা যুব সভাপতি নির্দল প্রার্থী পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরে দলবিরোধী কাজের অপরাধে নিশীথ প্রামাণিককে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করেন অভিষেক। এরপরই নিশীথ বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৯ সালে কোচবিহারের সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে দিনহাটা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু, পরে সাংসদ পদটি রাখতে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। এরপরই অমিত শাহর ডেপুটি হিসাবে ঠাঁই হয় নিশীথের।
একদা 'অনুগামী', বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে এদিন মাথাভাঙার সভা থেকে আগাগোড়া আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেই সঙ্গেই নিজের কাজ নিয়ে বলেন, কোচবিহারের সাংসদ, যিনি এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তিনি এক সময় আমার অধীনেই ছিলেন। কিন্তু আমি জানতে পারি ২০১৮ সালে আমার নাম করে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করেছেন। সেই সময়েই তাঁকে বহিষ্কার করেছিলাম। আমরা যাঁদের আবর্জনা ভেবে বহিষ্কার করি, অন্যরা তাঁদের সম্পদ ভেবে নেয়। আমি মনে করি দুষ্টু গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।'
অভিষেকের সংযোজন, 'আমরা ভুল করলে ভুল স্বীকার করতে জানি। তাই আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনারা আমার সঙ্গে থাকলে আমি সব ঠিক করব। এখন থেকে কোচবিহারের দায়িত্ব আমার। আপনাদের সমর্থন পেলেই সব কিছু ঠিক করা সম্ভব আমার পক্ষে।'
পঞ্চায়েতে প্রার্থী কারা হবে, এদিন তাও চাঁচাছোলা ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর সাফ কথা, 'কোনও দাদার চাটুকারিতা, ব্যাগ বোতলবয়ে পঞ্চায়েতে প্রার্তী হওয়া যাবে না। দু-একজনের জন্য দলের সম্মান নষ্ট হে ছেড়ে কথা হলব না।'