একেই তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে ফেরার ঘটনা ঘটছে মালদায়। তারপর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দলেরই একাংশ। তৃণমূলের পঞ্চায়েতের কর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তাঁদের। এবার কোন্দল মেটাতে জেলা নেতৃত্বের রীতিমতো ক্লাস নিলেন অভিষেক। অন্তর্কলহ মেটাতে পরামর্শ দিলেন তিনি।
শুক্রবার দুপুরে মালদা সফর শেষ করে মুর্শিদাবাদে যাওয়ার আগে ইংরেজবাজার ব্লকের সুস্থানি মোড় এলাকায় দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন ডাযমন্ড হারবারের সাংসদ। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীকেও ধমক দিয়েছেন তিনি। দলে যাতে কোনওরকম গোষ্ঠীকোন্দল বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দেন অভিষেক। পাশাপাশি যাঁরা সক্রিয় দলীয় নেতা, তাঁরা যাতে হাত গুটিয়ে বসে না থাকে তাঁদেরকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই বৈঠকটি চলে প্রায় দুই ঘন্টা। বৈঠক শেষেই কনভয় নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান সাংসদ অভিষেক।
আরও পড়ুন- কেষ্টর খাসতালুক থেকে কীভাবে বাংলাদেশে গরু পাচার? ইডি-র চার্জশিটে রহস্য ফাঁস!
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্যের দুই রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ও তাজমুল হোসেন। এছাড়াও ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ মৌসুম নূর, জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী, বিধায়ক চন্দনা সরকার, সাবিত্রী মিত্র, মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি রফিকুল হোসেন, ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদা পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, কার্তিক ঘোষ সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠক চলাকালীন অভিষেক মন্ত্রী তাজমুল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কে প্রার্থী হবে, সেটা ঠিক করবে রাজ্য নেতৃত্ব। আপনার কোনও অনুগামী নানা লোককে প্রার্থী করার কথা বলছে। এটা কিন্তু ঠিক নয়, বিষয়টা দেখুন।' দলের জেলা সভাপতি রহিম বক্সীর কাছে জানতে চান, 'রতুয়া, মালতিপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় ফজলুল হকের মত বেশ কিছু নেতারা বসে রয়েছেন কেন? তাঁদেরকে দলে গুরুত্ব দিচ্ছেন না কেন? তাঁদেরকে কাজে লাগান। বিষয়টি দেখুন।' বিধায়ক নিহার ঘোষের উদ্দেশ্যে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'চাঁচলে একটি ব্লকে দুজন সভাপতি কেন? বিষয়টি বসে মিটিয়ে ফেলুন।'
সূত্রের খবর, এদিন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন সাংসদকে অভিযোগ করেছিলেন সুজাপুরের বিধানসভার অন্তর্গত কালিয়াচক ১ ব্লক কমিটি ঠিকভাবে গঠন হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, 'দলীয় কমিটিতে কোনওরকম দুর্নীতি পরায়ন লোককে রাখা যাবে না। জেলা সভাপতি ও মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্যান্য নেতৃত্বরা বসে এই সমস্যার সমাধান করবেন।' হবিবপুরের ব্লক সভাপতি প্রদীপ বাস্কেকে উদ্দেশ্য করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আপনাকে তো দেখা যায় না। কোথায় থাকেন আপনি? দলের জন্য ঠিকমতো কাজ করুন। মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখুন।' ইংরেজবাজার ব্লকের সভানেত্রী প্রতিভা সিংহকে অভিষেক বলেন, 'কৃষ্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে আপনার এত বিবাদ কেন?' পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা প্রতিভা সিংহ কৃষ্ণেন্দুকে এজন্য দায়ী করেছেন। মোদ্দা কথা মালদায় দলের কোন্দল মেটাতে বৈঠকে কখনও ধমক দিলেন, নানা প্রশ্ন করে বিষয়গুলি জানার চেষ্টা করলেন, পাশাপাশি সব পক্ষকে বসে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।
আরও পড়ুন- সাগরদিঘি উপ-নির্বাচনের দু’মাসের মাথায় ‘ডিগবাজি’! ভোটের আগে জোটের ডাক মমতার
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে উপস্থিত মালদা জেলার সমস্ত নেতা-নেত্রীদের আগামী সাতদিনের মধ্যে যেসব এলাকায় বিক্ষোভ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে সেগুলি মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। চাঁচোল, হরিশ্চন্দ্রপুর, ইংরেজবাজার সহ একাধিক ব্লকে দলীয় নেতৃত্বের কাজকর্ম নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিষেক।
বৈঠক শেষে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, 'সকলকে একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, কোথাও কোনওরকম দলের সমস্যা থাকলে তার দ্রুত সমাধান করতে হবে। তবে গোষ্ঠী কোন্দল আমাদের নেই। কিছু বহিরাগত মানুষ লোকজনের সঙ্গ মিশে নানান ধরনের ভুলভাল বার্তা দিয়েছে, সেটাও আমরা জানিয়েছি। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীশূন্য করাটাই আমাদের এখন লক্ষ্য। যা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে গিয়েছেন।'