মতুয়াদের অন্যতম গড় নদিয়ার রানাঘাটের মিলন মন্দির ময়দানে শনিবার জনসভা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে নিয়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নেতা ও কর্মীদের কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সাফ বললেন, 'দিদি-দাদাকে ধরে পঞ্চায়েতের টিকিট মিলবে না। দরকার মানুষের সার্টিফিকেট। বেইমানি করলে কাউকে ছেড়ে কথা বলব না। ছড়ি ঘুরিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। ব্যক্তি স্বার্থে কেউ যদি দল করেন, তাহলে দলের দরজা খোলা আছে, বেরিয়ে যান।' রানাঘাট লোকসভায় ২০১৯ সালে হেরেছিল তৃণমূল। বিদানসবাতেও এই অঞ্চলে জোড়-ফুল বিশেষ পাপড়ি মেলতে পারেনি। কারণ হিসাবে দলের বেশকিছু নেতা, কর্মীর আচরণকে দায়ী করেছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। এরপরই মতুয়াদের কাছে তাঁর আর্জি, 'একজন ভুল করে থাকলে ক্ষমা করুন, কিন্তু মুখ ফেরাবেন না। কোনও পরিযায়ী সাইবেরিয়ান নেতাদের ভোট দেবেন না।'
মমতা-অমিত শাহ একান্তে বৈঠকের কিছুক্ষণের মধ্যেই রানাঘাটে বিজেপির বিরুদ্ধে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তোপ দাগেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এনআরসি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তাঁর সতর্কবাণী, 'ওরা সাইবেরিয়ার পরিযায়ী পাখি। ভোটের আগে আসে, ভোট হয়ে গেলে চলে যায়। রানাঘাট থেকে বিজেপির জঞ্জাল সরান।'
পঞ্চায়েত ভোটে গ্রামবাসীদের বাসিন্দাদের পছন্দ-অপছন্দকেও গুরুত্ব দিয়ে দলই প্রার্থী ঠিক করবে বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন অভিষেক। যোগ্য প্রার্থী র নাম জানতাকে সুপারিশ দিতে পরামর্শ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বলেন, 'আপনাদের যদি মনে হয়, কেউ পঞ্চায়েত ভোটে লড়ার জন্য যোগ্য প্রার্থী, তাহলে তার নাম সাজেস্ট করুন। আমাকে ফোন করে নাম বলুন। ৭৮৮৭৭৭৮৮৭৭ – এই নম্বরে ফোন করে জানান। আমি দেখছি। এখন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আমি। আমাকে যখনই ডাকবেন, তখনই পাবেন।'
আরও পড়ুন- শাহ-মমতা বৈঠক, বেজায় অস্বস্তি বঙ্গ বিজেপির, ড্যামেজ কন্ট্রোলে শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি ‘টাইম হো গিয়া’
সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের কাজের উপর যে অভিষেক কড়া নজর রাখছেন তাও স্পষ্ট করে দেন এদিনের সভামঞ্চ থেকে। তাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে অভিষেক সভা থেকেই তাঁকে ইস্তফার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, 'আপনি মানুষের জন্য কাজ করেননি। মানুষ আপনাকে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেও তাঁদের পাশে পায়নি, তাই সার্টিফিকেটও দেয়নি। আর তা না হলে তো আপনি আর প্রধান থাকতে পারেন না।'
দুর্নীতি ইস্যুকে হাতিয়ার করেই মমতা সরকারকে নিশানা করছে বিরোদী রাজনৈতিক দলগুলি। স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তির লক্ষ্যে দলীয় কর্মীদের প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিদান, 'ঠিকাদারি করলে তৃণমূলের টিকিট পাওয়া যাবে না। অনেকে আছেন স্ত্রীকে প্রার্থী করে নিজে ঠিকাদারি করেন। নাহয় নিজে প্রার্থী হয়ে স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি করেন। সেসব চলবে না।'
পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতি রয়েছে। রানাঘাটের সভায় মেনে নিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তবে রানাঘাট অঞ্চলে ঘাস-ফুল ফোটাতে মরিয়া অভিষেক। রানাঘাটবাসীকে তাঁর আশ্বাস, 'আর কোনওরকম দুর্নীতিকে তিনি প্রশ্রয় দেবেন না। দুর্নীতি দেখলে সরাসরি আমাকে জানাবেন। ভয় পাবেন না। আমি আপনাদের রক্ষাকর্তা'