বিগত লোকসভা হোক বা বিধানসভা। রাজ্যের পশ্চিমের জেলা বাঁকুড়ায় ভালো ফল করেনি তৃণমূল। আসন্ন পঞ্চায়েত বা লোকসভায় এবার সেই ধারার বদল চাইছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। না হলে তৃণমূল আর বাঁকুড়ার মানুষেরঅধিকার নিয়ে লড়াই আন্দোলন করবে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাঁকুড়ার ওন্দার সভার থেকে সাফ ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড'।
কী বলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়?
বাঁকুড়ায় বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি মজবুত। ১৯য়ের লোকসভা বা ২১য়ের বিধানসভায় তার প্রমাণ মিলেছে ইভিএমে। আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যের পশ্চিমের এই জেলায় কোনওভাবেই সুবিধা করতে পারেনি জোড়া-ফুল। ফলে বাংলার শাসককূলের মনে সেই ঘা এখনও দগদগে। ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় জনসভাতেও তা প্রকাশ ঘটল খোদ অভিষেকের বক্তব্যে।
এদিন ১০০ দিনের কাজ থেকে আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখায় বিজেপিকে আগাগোড়া নিশানা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বার্তা, ধর্মের ভিত্তিতে নয়, উন্নয়নের কাজের নিরিখে আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে যেন বাঁকুডা়বাসী ভোটদানের সিদ্ধান্ত নেন। বলেন, '২০১৯ ও ২১ সালে বিজেপিকে আপনারা ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু কী পেয়েছেন? নিজের বুকে হাত রেকে সেই প্রশ্ন নিজেকেই করুন। আমাদের সকলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০১৯ সালে আপনারা বিজেপিকে দুটি লোকসভা আসনে জিতিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে আটটিতে বিজেপিকে জিতিয়েছিলেন। পরে তন্ময় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলে আমাদের পাঁচজন বিধায়ক হয়। কিন্তু যাঁরা আচ্ছে দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, কেউ আচ্ছে দিন পেয়েছেন? ধর্মের ভিত্তি, নাকি উন্ননের জন্য, নিজেদের অধিকারের জন্য ভোট দেবেন সেটা নিজেরাই ঠিক করুন। মনে রাখবেন সামনের পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচন আপনাদের কাছে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ।'
অভিষেকের অভিযোগ, একুশের ভোটে হেরে যাওয়ার প্রতিশোধেই ১০০ দিন ও আবাস যোজনায় বাংলার বকেয়া আটকে রেখেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। বকেয়া আদায়ে দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতিও জোরকদমে করতে নির্দেশ দেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তাঁর হুঁশিয়ারি, '১ কোটি চিঠি ও বঞ্চিতদের নিয়ে গিয়ে দিল্লিতে কৃষিমন্ত্রকের সামনে বসব। দাবি আদায়ে স্লোগান হবে, ধরনা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। দেখি তারপরও কীভাবে কানে তুলো দিয়ে বসে থাকতে পারে।'
বক্তব্যের শেষপ্রান্তে এসে অভিমানের সুরে বড় উপলব্ধির কথা তুলে ধরেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, '১৯ সালে আপনারা মুখ ফিরিয়েছিলেন। ২১শেও ফিরিয়েছেন। আমরা কিন্তু ফেরায়নি। আপনারা ভুল পথে পরিচালিত হয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, আমরা অভিমান করিনি। কিন্তু এবার বলে গেলাম, আমনিও রক্ত মাংসের মানুষ, আমিও রক্ত মাংসের মানুষ। আপনি যদি নিজেরে অধিকার নিয়ে না লড়েন, আপনার ছেল, মেয়ে, পরিবারে ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজে না সরব হন তাহলে তৃণমূলও আপনার অধিকার নিয়ে ল়াই করবে না। আমি স্পষ্টভাবে বলছি আপনার অধিকারের জন্য আপনাকে নিজেকেই লড়াই করতে হবে। ভোট হবে উন্নয়নের ইস্যুতে, অন্য কোনও কিছুর উপর ভিত্তি করে নয়।'
বাঁকুড়াবাসীর প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ ধরণের বার্তা পঞ্চায়েতের আগে অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তব্য প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কালিয়াগঞ্জে বলেন, 'এত ঔদ্ধত্য যে একজন বলছেন জনগণ ভুল করেছেন। এ কথা বলার সাহস একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে কেউ কীভাবে পান? আমাদের সংবিধানটাই মানুষকে নিয়ে। সেই জনগণকেই বলছেন পাপ করেছেন প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। হেলিকপ্টার চড়ে গিয়ে বড় বড় কথা।'