কোচবিহার থেকে শুরু হল পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের 'নবজোয়ার' কর্মসূচি। মঙ্গলবার সকালে দিনহাটার বামনহাটে নিজের ক্যাম্পের অদূরেই মাধাইখাল কালী মন্দিরে পুজো দিয়ে নয়া কর্মসূচির সূচনা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্দিরে যাওয়ার সময় পথের দু'পাশে থাকা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জনসংযোগ সাড়েন তিনি। এরপর বিএসএফের গুলিতে মৃত প্রেমকুমার বর্মনের বাবা,মা-র সঙ্গে তাঁবুতে বসে কথা বলেন অভিষেক। দেখা করেন বিএসএফের মারে মৃত মৎস্যজীবী মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গেও। তারপর সাহেবগঞ্জে 'নবজোয়ার' কর্মসূচির প্রথম সভায় বক্তব্য পেশ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয সাধারণ সম্পাদক। আগামী পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ে স্থানীয়দের ভূমিকা নিয়ে সচেতন করেন তিনি। বুধিয়ে দেন তাঁদের অধিকার, দাবি-দাওয়ার বিষয়গুলি। একইসঙ্গে আগাগোড়া কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। বলেন, 'কোনও শাসক দল এভাবে রাস্তায় নামে না, বিরোধী দল নামে। আমরা ক্ষমতা থেকেও রাস্তায় নামছি, মানুষের পাশে যাচ্ছি। কারণ আমাদের কোনও অহঙ্কার নেই।' অর্থাৎ, স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল যে মরিয়া এবং শাসক দলে থেকেও উন্নয়ন ও মানুষের অদিকার আদায়ে যে বিরোধীদের ভূমিকা পালন করছে তা বোঝাতে চেয়েছেন অভিষেক। স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃণমূলের পার্থক্য।
একনজরে সাহেবগঞ্জে কী বলেছেন অভিষেক?
- 'কোচবিহারে আসার সময় যে উচ্ছ্বাস কোচবিহারবাসীর দেখেছি, তার জন্য আমি চিরজীবন আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। আজ প্রথম মিটিং আমরা সাহেবগঞ্জ থেকে শুরু করছি। গরমে আপনাদের খুব কষ্ট হচ্ছে আমি জানি। কিন্তু আগামী দিনে যদি এই প্রয়াসকে সফল ও স্বার্থক করতে হয়, তাহলে এই কষ্ট আমাদের সহ্য করতে হবে'
- 'দুই মাসের জন্য ঘর, বাড়ি, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সব ছেড়ে এসেছি আপনাদের সঙ্গে থাকব বলে। কোনও শাসক দল এভাবে রাস্তায় নামে না, বিরোধী দল নামে। আমরা ক্ষমতা থেকেও রাস্তায় নামছি, মানুষের পাশে যাচ্ছি। কারণ আমাদের কোনও অহঙ্কার নেই।'
- 'মানুষের সমর্থন এবং আগামী দিনে মানুষের পঞ্চায়েত গঠন করা। আপনারা পঞ্চায়েতে কাকে প্রার্থী চান, তা জানতে এসেছি। আপনার বুথে কে প্রার্থী হবে, তা তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক করবে না। আপনি যাঁকে প্রার্থী হিসেবে মান্যতা দেবেন, দলের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আমরা তাঁকে জিতিয়ে আনব। মানুষ ঠিক করবে মানুষের প্রার্থী কে। এটাই আমাদের অহঙ্কার। আমি এখানে রাজনৈতিক কথা বলতে আসিনি। রাজনৈতিক কথা হয়ত সারাবছর আপনারা শোনেন আমার মুখ থেকে।'
- 'তথাকথিত উত্তরবঙ্গ বলে একটি শব্দবন্ধ ব্যবহার করে কেউ কেউ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের ভোট নিয়ে পৃথক রাজ্য করার দাবি তুলেছে। তারা আপনাদের পাশে কখনও দাঁড়ায়নি। আগামী দিনে যখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, নিজের পঞ্চায়েতের কথা ভেবে করবেন। ২০১৯ সালে যখন আপনারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন, তখন একশো দিনের কাজ, আবাস, গ্রামের রাস্তার কথা ভেবে করেননি। কেউ বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন ২০১৯ সালে গ্রামের রাস্তা, পানীয় জল, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের উন্নতির কথা সামনে রেখে ভোট দিয়েছিলেন?'
- 'আগামী পঞ্চায়েতে কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগ নয়, মোদীজির ৫৬ ইঞ্চির ছাতি নয়, বালাকোটের নামে নয়, আপনার বাড়ির শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আপনাকে ভোট দিতে হবে। গ্রামে যাতে রাস্তা হয় এবং একশো দিনের কাজের টাকার দাবি যাতে দিল্লির বুক থেকে আপনি ছিনিয়ে আনতে পারেন, সেই জন্য ভোট দিতে হবে। নিজের অধিকার বুঝে নিতে, নিজের প্রার্থীকে বেছে নিতে ভোট দিতে হবে।'
- 'শুধু নিজের ভোট নিজে দিন, এই কথা নয়। নিজের ভোট তো নিজে দেবেনই। সেই সঙ্গে নিজের প্রার্থী বেছে নিন। এটা কেউ করবে না। আমাদের দরকার ছিল না রাস্তায় নেমে মানুষের পাশে থাকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২০২৬ সালের মে মাস পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছে। তার আগেই আমরা রাস্তায় নেমে আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। কারণ একজন বিধায়ক বা সাংসদ উন্নয়ন করতে চাইলেও পঞ্চায়েতে সঠিক প্রতিনিধি না থাকলে উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়।'
- 'প্রার্থী বেছে নিতে দলের তরফে ব্যালট পেপার সকলকে দেওয়া হবে। সেখানে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থীর নাম জানানো যাবে। এটি গোপান ব্যালট। আপনার নাম বা কিছু থাকবে না। এটি পূরণ করে ব্যালট বক্সে ফেলে দিন। তারপর মানুষ যাঁকে মান্যতা দেবে, তৃণমূল তাঁকেই প্রার্থী করে জেতাবে। বাংলায় ৩,৩৪৩টি পঞ্চায়েত রয়েছে। সব জায়গায় আমি যাব। মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে ছাড়ব। যাঁরা ব্যালটে পছন্দের প্রার্থীর নাম দিতে পারবেন না, তাঁদের জন্য একটি ফোন নম্বরও রয়েছে, ৭৮৮৭৭ ৭৮৭৭। এমন উদ্যোগ ভারতে কোনওদিন হয়নি।'
- 'আপনার পঞ্চায়েত কিন্তু আপনার পাহারাদার। ২০ লক্ষ পরিবার ১০০ দিনের কাজের টাকা পায়নি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেও তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। এক কোটি মানুষের চিঠি নিয়ে দিল্লিতে দাবি আদায়ে যাব।'