সীমান্ত রক্ষায় বিএসএফের বিরুদ্ধে প্রায়ই অতি-সক্রিয়তার অভিযোগ করে তৃণমূল। সরব খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর 'অত্যাচারে'র উদাহরণ নিজের মঞ্চেই দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার মাথাভাঙায় সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেখানেই নিজের সভামঞ্চে ডাকেন গরুপাচারের অভিযোগে বিএসএফের গুলিতে নিহত দিনহাটার রাজবংশী যুবকের পরিবারকে। নিহত প্রেমকুমার বর্মণকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তুলে ধরেন ২৪ বছরের যুবক প্রেমকে নির্মমভাবে 'হত্যা'র কাহিনী। পাশাপাশি নিহতের শোকার্ত পরিবারকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্য অশ্বাস দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাথাভাঙার অদূরেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এহেন অঞ্চলে সভা করে এদিন বিএসফের বিরুদ্ধ স্থানীয়দের উপর অত্যাচারের অভিযোগে সরব হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২৪ ডিসেম্বর বিএসএফের গুলিতে নিহত দিনহাটার গীতালদহ এলাকার বাসিন্দা প্রেমকুমার বর্মণের কথা তুলে ধরেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। অভিযোগ প্রেমকুমার গরু পাচারকারী। বিএসএফের এই অভিযোগ নস্যাৎ করেন অভিষেক। এরপর প্রেমের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট জনসমক্ষে তুলে ধরেন। বলেন, 'এই পোস্টমর্টেম রিপোর্টের লেখা আছে ওঁর শরীর থেকে ১৮০টা গুলির টুকরো পাওয়া গেছে। ভাবুন কী নৃশংসভাবে ওকে মেরেছে। বিএসএফের উপদ্রবের কথা আপনারা সবাই জানেন। কিন্তু এই যে নির্দোষ রাজবংশী যুবককে হত্যা করল কেন্দ্রীয় বাহিনী, আর যে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল রাজবংশীদের দরদ দেখায় আমি তাদের প্রশ্ন করছি, প্রেমকুমার কে ছিল? জঙ্গি? মাঠে যখন গিয়েছিল, তার কাছে বোমা-বন্দুক উদ্ধার হয়েছে? গরু পাওয়া গিয়েছে? সোনা পাচার করতে গিয়েছিল ওর থেকে গরু, বন্দুক কিছুই উদ্ধার হয়নি।'
এরপরই তাঁর আশ্বাস, '৫০টা ক্যামেরার সামনে বুক ঠুকে বলে যাচ্ছি, তোমাদের স্ট্যান্ড ক্লিয়ার করো। যে অফিসার জড়িত আছেন, কেউ ছাড়া পাবেন না। এটা অনৈতিক, আমি ছাড়ব না, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট যতদূর যেতে হয় যাব।'
অভিষেকের দাবি, 'ব্যালাস্টিক পারদর্শী বলেছেন তাঁর ৪০ বছরের পেশাগত জীবনে এত নৃশংসতা দেখেননি। গুলি মারার কারণে প্রেমকুমারের শরীরের একখোঁটা রক্ত ছিল না। ফলে সে মারা গিয়েছে।'
আরও পড়ুন- রাজ্যপালের সঙ্গে কথা শেষে তুলকালাম ইঙ্গিত সুকান্তর! তেলেবেগুনে জ্বলছে তৃণমূল
এরপরই নিহত প্রেমকুমার বর্মণের বাবা-মা শিবেন ও সুখীমণি বর্মণকে মঞ্চে ডাকেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, 'দেখুন তো এঁদের দেখে মনে হয় এঁরা জঙ্গির জন্ম দেবেন? কিন্তু বিএসএফের চোখে এঁদের ছেলেই জঙ্গি।' পাশাপাশি, তাঁর প্রতিশ্রুতি, 'আমি আজ আপনাদের কথা দিয়ে যেতে চাই যে, যে এই কাজ করেছে, সেভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী তথা এখানকার সাংসদ তাহলেও আমি এর শেষ দেকে ছাড়ব। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব, একমাসের মধ্যে পদক্ষেপ হবে।'
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আমি এর জন্য কিছু চাই না। বদলে পথ চলতে গিয়ে আপাদের আশীর্বাদ ও ভাোবাসাটা শুধু চাই।' এই লড়াই লড়তে গিয়ে কোচবিহারের মানুষের সহযোগিতা পাবেন কিনা তাও জনগণকে জিজ্ঞাসা করে নেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
পরে মঞ্চ থেকে যাওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রেমকুমারের মা সুখীমণি বর্মণ। সেসময় নিজের রুমাল দিয়ে অভিষেক তাঁর চোখের জল মুিয়ে দেন। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, মাথাভাঙা মহকুমায় দুই বিধানসভা- মাথাভাঙা ও শীতলখুচি বিজেপির দখলে। পদ্ম ফুটেছে তার পাশের কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভাতেও। এই তিন বিধানসভা এলাকাতেই রাজবংশী ভোটার যথেষ্ট। যাঁদের অনেকের মধ্যে পৃথক 'রাজ্য' নিয়ে আবেগ রয়েছে। সেই মাথাভাঙায় দাঁড়িয়ে নিহত রাজবংশী যুবকের নির্মম 'হত্যা'র কথা তুলে ধরে বিজেপির স্বরূপ চেনাতে মরিয়া হলেন তৃণমূলের এই শীর্ষ নেতা।