কাল বাদে পরশু। দেশের নজর থাকবে বিহারের রাজধানী শহর পাটনায়। ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই শহরেই নজির গড়ে অবিজেপি দলগুলির 'মেগা' বৈঠক হতে চলেছে। মূল উদ্দেশ্য, আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি বিরোধী ফ্রন্ট গঠনের সূত্র নির্ধারণ। সেই বৈঠকে যোগ দেবন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু মমতাই নয়, তাঁর সফরসঙ্গী হচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর আগে দিল্লিতেও অভিষেক বিজেপি বিরোধী দলের নেতাদের বৈঠকে মমতার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পাটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলোর বৈঠকে মমতা-অভিষেকের একসঙ্গে যাওয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে অভিষেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের নিরিখে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
অভিষেক পাটনা নিয়ে গিয়ে মূলত এক ঢিলে দুই পাখি মারতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমত, বিজেপি বিরোধী দলগুলোর 'মেগা' বৈঠকে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, নীতীশ কুমার, এমকে স্ট্যালিন, শরদ পাওয়াদের মতো জাতীয় রাজনীতির হেভিওয়েটরা থাকবেন। সেখানে অভিষেককে নিয়ে যাওয়া অবশ্যই অর্থবহ। কারণ এতে অভিষেকের পারদর্শী রাজনৈতিক বোধেকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরতে পারবেন মমতা। অর্থাৎ জাতীয় স্তরে অবিজেপি মঞ্চে অভিষেকের ওজনও একলপ্তে বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
দ্বিতীয়ত, বাংলায় তৃণমূলের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, প্রতিপক্ষ বাম-কংগ্রেসও। অধীর চৌধুরী, মহম্মদ সেলিমরা উঠতে বলতে নিশানা করছেন মমতা ও অভিষেককে। পাল্টা তৃণমূল নেত্রীরও বাংলার কংগ্রেস, বামেদের বিজেপির দোসর বলে কটাক্ষ ছু়ড়ে দেন। এই প্রেক্ষাপটে পাটনার মঞ্চে মমতা, অভিষেকের সঙ্গেই দেখা যাবে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, সীরামা ইয়েচুরিদের। ফলে পঞ্চায়েতের আগে একমঞ্চে দলীয় নেতৃত্বকে মমতা-অভিষেকের সঙ্গে দেখা বিড়ম্বনার হতে পারে কংগ্রেস, বামেদের রাজ্য নেতাদের কাছে। আদতে তৃণমূলই যে বিরোধী জোটের অন্যতম চালিকা শক্তি তা প্রমাণ সহজ হবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
উল্লেখ্য, পাটনায় এই বিরোধী দলগুলির 'মেগা' বৈঠক হচ্ছে মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে। মাস দুয়েক আগে নীতীশ কুমার ও তেজস্বী যাদব নবান্নে এসেছিলেন। সেদিনই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী পরামর্শ দিয়েছিলেন, বিজেপি বিরোধী দলের নেতাদের বৈঠক হোক পাটনায়। তার ব্যাখ্যা হিসাবে মমতা বলেছিলেন, জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণের আকন্দোলন শুরু হয়েছিল বিহার থেকে। তারপর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই এই ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’র বিরুদ্ধে আন্দোলনের সলতেটা পাকুক বিহার থেকেই। সেই বৈঠকই পিছিয়ে শেষ পর্যন্ত হবে আগামী শুক্রবার।