বুধবার বাংলার বকেয়া পাওনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। রবিবারই দিল্লি যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিনই রাজধানী যাবেন দলের 'সেকেন্ড-ইন-কমান্ড' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূলের যে প্রতিনিধি দল যাবে তাতে থাকছেন অভিষেক।
বাংলার বকেয়া নিয়ে সরব তৃণমূল। দাবি আদায়ে পুজোর আগে দিল্লি ও কলকাতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ধর্না কর্মসূচি হয়েছে। কিন্তু, পুজো মিটতেই সেই আন্দোলন গতি হারায়। বদলে শাসক দলের অন্দরের 'বিবাদ' মাথাচাড় দেয়। চর্চায় আসে জোড়-ফুলের অন্দরের 'এক ব্যক্তি এক পদ' ও 'বয়সসীমা' বিতর্ক। স্পষ্টতই তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও 'সেনাপতি' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে মতপার্থক্য ধরা পড়ে। আর তাতেই তোলপাড় হয় বঙ্গ রাজনীতি। গুঞ্জন চলে ঘাস-ফুলের অন্দরেও।
নভেম্বরের শেষে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনে দেখা যায়নি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। চোখে রক্তক্ষরণের কারণেই তাঁর গড়হাজিরা বলে দাবি করেছিলেন খোদ দলনেত্রী। এরপর কুণাল ঘোষের মন্তব্যে বিতর্কের শুরু। তিনি বলেছিলেন, 'কারা এটা করেছেন, আমি বলতে পারব না। তবে এটা ঠিক হয়নি। এখন অভিষেকের ছবি ছাড়া তৃণমূলের মঞ্চ অসম্পূর্ণ। এটা হতে পারে না।' যা মমতা-অভিষেককে ঘিরে দলের অন্দরে নেতৃত্বের আড়াআড়ি টানাপোড়েনের ইঙ্গিত জোড়াল করেছিল। তারপর কুণাল বলেছিলেন, 'ব্যাপারটা কখনওই মমতাদি বনাম অভিষেক নয়। ব্যাপারটা মমতাদি এবং অভিষেক। এক জনকে ঘিরে আবেগ রয়েছে। আর এক জন সময়ের কথা বিবেচনা করে দলের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা দেখছেন।' কিন্তু এতে বিতর্কের ইতি ঘটেনি।
আরও পড়ুন- হাইকোর্টের বিরাট নির্দেশ, তড়িঘড়ি হাসপাতালে মন্ত্রী বালুর কেবিনে কন্যা ও দাদা
এরপর মমতা-অভিষেককে একসঙ্গে নজরে পড়েনি। উল্টে খুড়তুতো ভাইয়ের বিয়েতে দার্জিলিং যাওয়ার পথে অভিষেক রাজনীতিতে প্রবীণদের 'প্রোডাক্টিভিটি' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাজনীতিতে তারুণ্যের পক্ষে সওয়াল করেন। তার আগে নেতাজি ইন্ডোরের সভায় অবশ্য আশি ছুঁইছুইঁ সৌগত রায়ের নাম করেই তাঁকে আগামিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ায় অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরও দলে 'বয়সসীমা' ও 'এক ব্যক্তি এক পদ' নিয়ে নিজের অবস্থান অনড় থাকেন। যা পিসি-ভাইপোর প্রকট মতভেদের প্রকাশ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
পাহাড় সফরে মমতা-অভিষেককে একসঙ্গে না দেখা যাওয়ায় প্রশ্ন ওঠে তৃণমূলের ভিতরেই। নানা কথা বলতে থাকেন বিরোধী নেতৃত্ব। জল্পনা যখন তুঙ্গে তখনই মমতার একটা সিদ্ধান্তে বিতর্ক অন্য খাতে মোড় নিল। তৃণমূল সূত্রে খবর, বকেয়া ইস্যুতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তৃণমূলের সাংসদদের যে প্রতিনিধি দল যাচ্ছে তাতে থাকবেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
মমতা-অভিষেক দ্বন্দ্ব আসলে বিরোধীদের 'অপপ্রচার'। অস্বস্তির মাঝেই এতদিন এই দাবি করে এসেছে তৃণমূল। অভিষেকও দাবি করেছেন দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনও বিবাদ নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে সিদ্ধান্ত যেন এই বিতর্কেই লাগাম পড়াল। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষেই লাগাম, নাকি ছাই সরালেই আগুন দেখা যাবে- তার উত্তর রয়েছে সময়ের গর্ভেই।
আরও পড়ুন- তলে তলে রফা পাকা? অনুপম তৃণমূলে ফিরলেই লুফে নেবেন কাজল!