এবার কুড়মিদের তুমুল বিক্ষোভের মুখে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের গাড়িতে এলোপাথাড়ি লাঠিপেটা এমনকী 'চোর চোর' স্লোগান ওঠে বলেও অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড় শালবনিতে শুক্রবার সন্ধেয় বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক বীরবাহা হাঁসদার গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। সব মিলিয়ে ভরসন্ধেয় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় শালবনিতে। যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলায় তাঁদের যোগ নেই বলেই দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজের সভাপতি রাজেশ মাহাত।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলায়-জেলায় ঘুরে 'তৃণমূলে নবজোয়ার' কর্মসূচি সারছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত অভিষেক রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধেয় পশ্চিম মেদিনীপুরের গড় শালবনিতে অভিষেকের কনভয় যাওয়ার আগেই রাস্তা পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ ছিল। অভিষেকের কনভয় সেখানে পৌঁছতেই তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। অভিযোগ, কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকেই অভিষেকের কনভয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।
তৃণমূল নেতার কনভয়ের বেশ কয়েকটি গাড়িতে লাঠিপেটা করা হয়েছে, এমনকী চোর চোর স্লোগান পর্যন্ত উঠেছে বলেও অভিযোগ। অভিষেকের কনভয়ের সঙ্গেই ছিল রাজ্যের মন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক বীরবাহা হাঁসদার গাড়ি। বীরবাহার গাড়ির কাচ ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনার পরে লোধাশুলিতে গিয়ে দলের কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। আদিবাসী কুড়মি সমাজের নামে বিজেপি এই বিক্ষোভে উসকানি দিচ্ছে বলে দাবি তৃণমূল নেতার।
আরও পড়ুন- ব্যারাকপুর শুটআউট: ২ দাগী দুষ্কৃতীকে জালে পুরে বিরাট আশঙ্কা খোদ পুলিশেরই!
এদিনের বিক্ষোভ-হামলা প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, 'এর পিছনে কারা রয়েছে আমরা সব জানি। আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হয়, গুণ্ডামি হয় না। এর পিছনে কারা আছেন আমরা খুঁজে বের করব। বীরবাহার গাড়িচালক গুরুতর আহত হয়েছেন।'
একইসঙ্গে আদিবাসী কুড়মি সমাজের শীর্ষ নেতাদেরও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, 'কুড়মি নেতাদের আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে এটা স্পষ্ট করতে হবে যে আজকের ঘটনার সঙ্গে তাঁদের যোগ আছে কিনা। উন্মত্তভাবে গুণ্ডামি করেছে, গলায় পতাকা জড়িয়ে দিয়ে বাইক থেকে নামিয়ে মেরেছে।' এই বিক্ষোভের পিছনে উসকানি কাজ করেছে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা। তিনি আরও বলেন, 'রাস্তায় বসে মশাল জ্বালিয়ে কোন আন্দোলন? গাড়ির উপর হামলা করে আন্দোলন? অনুরোধ করছি প্ররোচনায় পা দেবেন না।'
তবে শালবনিতে তাঁর কনভয়ে হামলায় জড়িতদের রেয়াত করা হবে না বলে কড়া বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, 'যারা হামলা করেছে আমি সবাইকে চিহ্নিত করেছি। চার-পাঁচশো লোক ইট পাটকেল মারবে আর ভাববে যা ইচ্ছে করব প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে না? আমি গাড়ি থেকে নামতেই ওরা পিছিয়ে গেল। হিংসা সমর্থন করি না। হতাশা থেকে এগুলো করছে। দিলীপ ঘোষ হুমকি দিলে তখন কুড়মিদের কী হয়?' অন্যদিকে এদিন রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, '১২-১৪ জন আহত হয়েছেন। রাজেশ মাহাত দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি তাঁর কাছে জবাব চাই।'
এদিকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলায় তাঁদের যোগ নেই বলেই এদিন দাবি করেছেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাত। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি এদিন বলেন, 'ওখানে লোকজন জড়ো হয়েছিল। স্থানীয় লোকজন ছিল। প্রশাসন বুঝবে কীভাবে কনভয় নিয়ে যাবে। প্রশাসন আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। আমরা তো যানজট ক্লিয়ার করে দিয়েছিলাম। অন্ধকারের মধ্যে লোকজন জড়ো হয়েছে। কে কোথায় ঢিল ছুঁড়ল সেটা তো আমাদের দায়িত্ব নয়। আমাদের এমন কোনও উদ্দেশ্য নেই। এই ঘটনার সঙ্গে কুড়মি সমাজের যোগ নেই।'