বিজেপি কর্মীদেরকে ধন্যবাদ দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাওড়ায় 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিয়েছেন। রবিবার অভিষেক বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে হয়তো সত্যিকারের ঈশ্বর বা রামচন্দ্রকে দেখতে পায়! সেই কারণেই হয়তো জয় শ্রীরাম বলছে। আমি তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাই। সেই শ্রদ্ধা, সেই সম্মান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁরা দিয়েছেন।'
শুক্রবার বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাওড়ায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে উপস্থিত বিজেপি কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দেন। যা নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়েছে বিজেপির অভ্যন্তরেই। সূত্রের খবর, দলের একাংশ এভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দেওয়ার বিরোধিতা করেন।
কারণ, ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিয়েছিলেন জনাকয়েক বিজেপি কর্মী। যাতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী রেগে বক্তৃতাই দিতে চাননি। সাম্প্রতিক অতীতে, রাজ্য রাজনীতিতে বারবার দেখা গিয়েছে, বিজেপি কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিচ্ছেন।
এর সূত্রপাত ২০১৯ সালের ১৪ জুন। বীজপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় লক্ষ করে আচমকা 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দেন জনাকয়েক বিজেপি কর্মী ও কয়েকটি শিশু। গাড়ি থামিয়ে রেগেমেগে ওই বিজেপি কর্মী ও শিশুদের দিকে তেড়ে যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় ব্যারাকপুরের 'দাপুটে' তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং ছিলেন বিজেপিতে। আর, তাঁর 'কৃষ্ণ' মুকুল রায়ও গেরুয়া শিবিরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই তেড়ে যাওয়ার দৃশ্য গোটা দেশে সংবাদমাধ্যমের দৌলতে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্তেজিত করার জন্য বিজেপি কর্মীরা 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিয়েছেন। এমন অভিযোগ বিভিন্ন জায়গা থেকেই উঠতে শুরু করে।
রবিবার সেই কারণেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাওড়ার ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন সাংবাদিকরা। তপসিয়া পুনরায় নির্মীয়মাণ তৃণমূল ভবনের ভিতপুজো শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিষেক। সেখানেই তিনি কটাক্ষের সুরে বিজেপি কর্মীদের ধন্যবাদ দেন। বিজেপি কর্মীদের আচরণের নিন্দা করে অভিষেক বলেন, 'দেখুন, এটা লজ্জার! আমি কী বলতে পারি। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি একই জিনিস ঘটেছিল। তার পুনরাবৃত্তি আবার আমরা গত পরশুদিন দেখলাম। ভুল করেও যাঁরা শেখে না, তাঁদেরকে আমি কী বলতে পারি? নির্বোধ ছাড়া তো আর কিছু বলার জায়গা নেই।'
এরপর অভিষেক বলেন, 'সরকারি মঞ্চে যাঁরা রাজনৈতিক স্লোগান ব্যবহার করে, তার মানে ধরে নেওয়া যায় তাঁরা রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া। আপনি বলুন না, আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে, তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ শুনেছেন? কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, তৃণমূল যুব কংগ্রেস জিন্দাবাদ এসব শুনেছেন, দলের নামে জয়ধ্বনি?'
আরও পড়ুন- তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের আঙুল শুভেন্দু ও বিজেপির দিকে ঘোরালেন অভিষেক
বিজেপি কর্মীদের কী বলতে হবে, তা-ও শিখিয়ে দেন অভিষেক। তিনি বলেন, 'আপনি ভারত মাতা কি জয় বলুন। বন্দেমাতরম বলুন। আপনি জয়হিন্দ বলুন। আপনি জয় বাংলা বলুন। দেশমাতৃকার প্রতি আপনার যদি সম্মান থাকে, আপনি দেশের নামে জয়ধ্বনি তুলুন।'
এরপর কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক বলেন, '২০১৯ সালে যাঁরা জয় শ্রীরাম বলে একবুক স্বপ্ন নিয়ে রাস্তায় হেঁটেছিল, নেমেছিল, রাজনীতি করেছিল, আজকে পেট্রোল পাম্পে যখন ১০০ টাকা দিয়ে পেট্রোল কিনতে হয়, ৯৫ টাকা দিয়ে যখন ডিজেল কিনতে হয়, ১,২০০ টাকা দিয়ে রান্নার গ্যাস কিনতে হয়, জয় শ্রীরাম বললে কিন্তু রান্নার গ্যাসের দামটা ১,২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা হয় না। জয় শ্রীরাম বললে পেট্রোলটা কিন্তু, ১১০ টাকা থেকে ৮০ টাকা হয় না। জয় শ্রীরাম বললে কিন্তু, ডিজেলের দামটা ৯৫ থেকে ৬০ হয় না। এটা তাঁদের উপলব্ধি করা উচিত।'