দিল্লির বিক্ষোভ কর্মসূচি সেরে বুধবার ফিরলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার মুখে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের মন্তব্য নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিষেক বলেন, 'গিরিরাজ সিং যে দাবি করছেন, সেই দাবি যদি নস্যাৎ করে দিতে হয়, তবে সিসিটিভি ফুটেজটা প্রকাশ করা উচিত। যে সিসিটিভি ফুটেজ কৃষিভবনে রয়েছে, সেটা তৃণমূল সরকারের অধীনে পড়ে না। সেটা সিআইএসএফ, দিল্লি পুলিশ এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রক, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে পড়ে। দায়িত্বে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আমরা ৬টায় পৌঁছেছি। প্রায় একঘণ্টা, সওয়া একঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমাদের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন এবং লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র দু'জন আলাদা করে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যায়। কারণ, দেড়ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পরও তিনি সময় দেননি। তারপর তৃণমূলের ফেসবুক পেজ থেকে আমরা ফেসবুক লাইভ করি। এগুলো ডকুমেন্টেড, মিথ্যে কথা নয়।'
এর আগে বুধবার কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী গিরিরাজ সিং অভিযোগ করেন, 'দিল্লিতে কৃষি মন্ত্রকে তৃণমূল বিক্ষোভ দেখিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জনকে জ্যোতিকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দফতরেই অপেক্ষা করানো হয়েছে। অথচ, তৃণমূলের কোনও সাংসদ বা মন্ত্রী দেখা করেননি। ৫০০ লোক নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে কৃষি মন্ত্রকে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে অরাজকতা চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে ২ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে। শুধু এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পতেই দেওয়া হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ এখন দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। সর্বত্র লুঠ চলছে। তা লুকোতে এই অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।'
অভিষেক বলেন, 'আমরা যদি ঝামেলাই করতে যেতাম, তাহলে আমাদের ওখানে ৫,০০০ লোক ছিল। আমরা সভা শেষ হওয়ার পর সবাইকে বলেছিলাম যে আপনারা কেউ যাবেন না। প্রতিনিধিদলে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা শুধুমাত্র যাবেন। একেকজনের পরিচয়পত্র চেক করে তাঁদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল। কৃষিভবনে যখন এই ৪০ জন ঢুকেছিল, যদি ডেলিগেশনের পার্ট না-হয়, তবে ঢুকতে দিল কেন? সবার তো নাম দেখে, আইডি দেখে, চেক করে, ডকুমেন্টেড মেইল রয়েছে। পরবর্তীকালে প্রায় দু'ঘণ্টা-আড়াই ঘণ্টা বসে থাকার পর, আমরা আবার যখন খোঁজ নিতে আমাদের সাংসদদের পাঠালাম, তখন সিআইএসএফের নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এসে বললেন, এইমাত্র প্রতিমন্ত্রী বেরিয়ে গেলেন। পিছনের দরজা দিয়ে তিনি চলে গেলেন। উনি যদি অপেক্ষা করেছেন, আমরা তো অপেক্ষা করার সময় চারটা ফেসবুক লাইভ করেছি, উনি করেননি কেন? সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হোক, দেখানো হোক না, আমাদের প্রতিনিধিরা কতবার তাঁর দফতরের করিডরে গিয়ে দেখা করার চেষ্টা করেছে। ফুটেজ প্রকাশ করলেই বোঝা যাবে।'
এর আগে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী স্বাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের বিক্ষোভ ইস্যুতে বার্তা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দফতরেই ছিলেন। ৬টার সময় তৃণমূল প্রতিনিধিদের দেখা করতে আসার কথা ছিল। কিন্তু, দেখা করতে আসেননি।
তার পালটা অভিষেকের অভিযোগ, 'আমরা যখন জানতে পারি যে মন্ত্রী পালিয়ে গেছেন, তখন সেই করিডরেই আমরা বসে পড়ি। কারণ, উনি আমাদের সময় দিয়েছেন। কারণ, আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে উনি চলে যেতে পারেন না। এখানে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও আছেন। কিন্তু, তার প্রায় পাঁচ মিনিট পর থেকে আমাদের ধমকানো, চমকানো, একেকজন মহিলা সাংসদের ওপর ২০-২২ জন পুলিশ লাগিয়ে পুরোটাই ডকুমেন্টেড। পুরোটাই ভিডিওতে ধরা পড়েছে, আপনারা দেখেছেন। এখানে বাড়িয়ে বলার কোনও জায়গা নেই। ক্যামেরার পরদায় যা ধরা পড়েছে, ছবি কোনওদিন মিথ্যে কথা বলে না। মহুয়া মৈত্র থেকে শুরু করে বীরবাহা হাঁসদা, প্রতিমা মণ্ডল, দোলা সেন, শান্তনু সেনদের টর্চার করে, মহিলাদের চুলের মুঠি ধরে টেনে-হিঁচড়ে কুকুর-বিড়ালের মত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের একমাত্র দোষ যে বাংলার মানুষের জন্য দাবি করতে এসেছিলেন, পাওনা টাকা যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।'
আরও পড়ুন- দিল্লিতে তৃণমূলের বিপ্লব, বিজেপির পুলিশি তাণ্ডব- বাইনারি পলিটিক্সের প্রতিচ্ছবি?
অভিষেকের প্রশ্ন, 'আমি শুধু একটাই দাবি করছি, আপনারা প্রেস রিলিজ করে জানান যে এই ২০ লক্ষকে লোককে দিয়ে আপনারা কাজ করিয়েছেন কি না? এই ২০ লক্ষ লোক যদি কাজ করে থাকে, আপনি কোন ধারার নিরিখে আপনি এঁদের টাকা বা পারিশ্রমিক আটকে রেখেছেন?'