প্রেমিককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে প্রেমিকা-সহ তাঁর বাবা-মা ও দাদার ঠাঁই হল শ্রীঘরে। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার কেওটারা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত প্রেমিকার নাম সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় ওরফে ফুলু। অপর ধৃতরা হল প্রেমিকার বাবা তাপস চট্টোপাধ্যায়, মা পম্পা চট্টোপাধ্যায় ও দাদা তারকনাথ চট্টোপাধ্যায়। আত্মঘাতী প্রমিক রাহুল ঘোষের বাবা প্রশান্ত ঘোষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে জামালপুর থানার পুলিশ শনিবার রাতে তাঁদের গ্রেফতার করেছে। ধৃত চার জনকেই রবিবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ। বিচারক প্রেমিকাকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজত ও বাকি ধৃতদের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জামালপুর থানার আবুজহাটি ১ পঞ্চায়েতের কেওটারা গ্রামে বাড়ি বছর ২২-এর রাহুল ঘোষের। একই গ্রামের বাসিন্দা বছর ১৯-এর সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়। রাহুল স্থানীয় পঞ্চায়েতে ভেক্টর কন্ট্রোল টিম (VCT)-এর স্বল্প বেতনভুক কর্মী ছিলেন। সুপর্ণা উচ্চমাধ্যমিকে পাঠরত অবস্থায় লেখাপড়ায় ইতি টানে। মৃতের পরিবার-পরিজন ও এলাকাবাসীর দাবি, রাহুল ও সুপর্ণার মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। রাহুল গভীরভাবে সুপর্ণাকে ভালবেসেছিল। কিন্তু, কোনও অজ্ঞাত কারণে সুপর্ণা আর সম্পর্ক রাখতে চাইতো না রাহুলের সঙ্গে। তা নিয়ে রাহুল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল।
মনের কষ্টে সে শুক্রবার কীটনাশক খেয়ে নেয়। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। শনিবার সেখানেই রাহুলের মৃত্যু হয়। রাহুলের মৃত্যুর খবর শনিবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে ও পরিজনদের কাছে পৌঁছয়। তার পরেই গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সুপর্ণা ও তাঁর পরিবারের লোকজন রাহুলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সোচ্চার হন মৃতের পরিবারের লোকজন।
রাতে মৃত যুবকের পরিবারের রোষ আছড়ে পড়ে সুপর্ণাদের বাড়িতে। খবর পেয়ে জামালপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভ সামাল দেয়। পরে মৃত যুবক রাহুলের বাবা প্রশান্ত ঘোষ পুলিশের কাছে সুপর্ণা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ রাহুলের প্রেমিকা সুপর্ণা, তাঁর বাবা-মা ও দাদাকে গ্রেফতার করে। যদিও রাহুলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেবার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সুপর্ণার দাদা তারকনাথ চট্টোপাধ্যায় ও বাবা
তপস চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- বাংলা বোমায় উন্নতি করেনি, বোমা তৈরির ফরমুলা জানিয়ে দাবি সৌগতর
জামালপুর থানা থেকে বর্ধমান আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তারকনাথ সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁর বোনের সঙ্গে রাহুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ঠিকই। কিন্তু, সেই সম্পর্ক মেনে নেয়নি রাহুলের পরিবারই। সম্পর্ক না-রাখার কথাও রাহুলের বাবা ও মা সুপর্ণাকে জানিয়ে দেন। একইসঙ্গে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছিলেন, 'সুপর্ণা যদি রাহুলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে তবে তাঁরা সুইসাইড করে আত্মঘাতী হবেন। সুপর্ণা ও আমদের সবাইকে ফাঁসিয়ে দেবেন।'
এমন হুঁশিয়ারির কথা শোনার পর সুপর্ণা প্রায় একবছর হল আর সম্পর্ক রাখতো না রাহুলের সঙ্গে। তা সত্ত্বেও সুপর্ণার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে নাছোড় ছিল রাহুল। অন্য ছেলের সঙ্গে সুর্ণার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। তা রাহুল জানতে পেরে যায়। তখন রাহুল আবার হুঁশিয়ারি দেয় যে তাঁকে ছেড়ে সুপর্ণা যদি অন্য ছেলেকে বিয়ে করে, তাহলে সে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। তারকনাথ ও তাঁর বাবা তাপস বাবু বলেন, 'রাহুলের এই হুঁশিয়ারির কথা আমরা রাহুলের মায়ের কাছে গিয়ে সব বলি। তা শুনে রাহুলের মা রাহুলকে প্রচণ্ড বকাবকি করেন। তার পরেই রাহুল বিষ খেয়ে নেয়। অথচ রাহুলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনে আমাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার করানো হল।'