জাতীয় সড়কে রাস্তার গতি যেন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। উলাটপুরান ঘটছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে কলকাতা যাতায়াতে। ৫ বছর আগে বর্ধমান-করুণাময়ী রাতের দিকে সরকারি বাসে ১ নম্বর এয়ারপোর্টে আসতে যে সময় লাগতো এখন তার দ্বিগুন সময় লাগছে। আগে সময় লাগতো ২-২ ঘন্টা ২০ মিনিট, এখন তা সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা হয়ে যাচ্ছে। রাতে একে তো ডানকুনি টোলপ্লাজায় যানজট, তারওপর ডানকুনি থেকে মাইতিপাড়ার মোড় পর্যন্ত ভয়ঙ্কর জ্যাম। পাশাপাশি খানাখন্দে ভরা রাস্তা। এবার এই যানজট নিরসনে উদ্যোগী হল প্রশাসন।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ডানকুনি ছাড়িয়ে কলকাতা অভিমুখে আসতেই প্রবল যানজটের মুখে পড়তে হয়। রাতের দিকে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ডানকুনি হাউজিং মোড় থেকে মাইতিপাড়া পর্যন্ত গাড়ি এগোতেই চায় না। এই যানজট এড়াতে এবার বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে হুগলি জেলা প্রশাসন।
চুঁচুড়া জেলাশাসকের অফিসে মঙ্গলবার দুপুরে জেলাশাসক দীপা প্রিয়া পি এক বৈঠক করেন। বৈঠকে চণ্ডীতলার বিধায়ক স্বাতী খন্দকার, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধক্ষ্য সুবীর মুখোপাধ্যায়,ডানকুনি এবং চণ্ডীতলা থানার আধিকারিক, চন্দননগর কমিশনারেট এবং হুগলি গ্রামীণ পুলিশের বিভিন্ন আধিকারিকের সঙ্গে ন্যাশনাল হাইওয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বেই ঠিক হয়েছিল পালসিট থেকে ডানকুনি অবধি দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ৬ লেন হবে। তার জন্য জায়গা অধিগ্রহণের কোন অসুবিধা হবে না বলে পূর্ত কর্মাধক্ষ্য জানিয়ে দেন। এই সম্প্রসারণ আগামী তিনবছরের মধ্যেই সমাপ্ত হবে বলে জানান হয়েছে। পাশাপাশি ঠিক হয়েছে ডানকুনি হাউজিং মোড়ের পড়ে যে মোড়টি পরে অর্থাৎ হুগলি-হাওড়ার সীমানা, সেই মাইতিপাড়া মোড় এলাকার দু'পাশের রাস্তা ৩ মিটার করে সম্প্রসারণ করে সাইড সোল্ডারিং করা হবে। এই কাজের জন্য় জেলাশাসক আগামী ৩১ ডিসেম্বর এর সময়সীমা বেঁধে দেন। তার মধ্যেই ডানকুনি এফ সি আই মোড় থেকে মাইতি পাড়া অবধি রাস্তার সমস্ত ফুটোফাটা সারিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে বড় সমস্যা ডানকুনি টোলপ্লাজা থেকে মাইতি পাড়ার মধ্যে। রাতের দিকে প্রবল যানজটের জন্য ইতিমধ্যেই এই এলাকা 'সুখ্যাতি' লাভ করেছে। চড়া টোল ট্যাক্স দিয়েও কেন জ্যামের মুখে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি আটকে থাকবে? এই হাইওয়ের মাথা বর্ধমানে পড়লেও পেট পড়ে হুগলিতেই। এর মধ্যে এই রাস্তা গুড়াপ, ধনিয়াখালি, দাদপুর, হরিপাল, সিঙ্গুর, চণ্ডীতলা, ডানকুনি হয়ে হাওড়া জেলায় প্রবেশ করে। আর ডানকুনি বাদে বাকি থানা এলাকাগুলি হুগলি গ্রামীন পুলিশের অধীনে। ডানকুনি চন্দননগর কমিশনারেটের এলাকা। তা সত্ত্বেও যানজটের সমস্যা নিরসনের জন্য পুরো রাস্তার ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্প্রতি হুগলি গ্রামীণের হাতে তুলে দিয়েছিল নবান্ন। তবুও যানজটের সমস্যা যায়নি। প্রথমত হেভি ভেহিকলসগুলির আধিপত্য এবং মাইতি পাড়ার ছোট পরিসর অনেকটা বোতলের ঘাড়ের মতো। তাই মাইতি পাড়া মোড় চওড়া করার কথা ভাবা হয়েছে।
তবে আগামী দিনে এই জ্যামের সমস্যা চিরতরে দূর করতে উড়ালপুলের চিন্তা ভাবনা করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তিন তিনটি উড়ালপুল করবে হাইওয়ে কতৃপক্ষ। জানালেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধক্ষ্য সুবীর মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, ডানকুনি টোলপ্লাজা থেকে উড়ালপুল উঠে নামবে মাইতি পাড়ার শেষে হুগলি হাওড়ার সীমানায়। তবে এই উড়ালপুল করবে ন্যাশনাল হাইওয়ে কতৃপক্ষ। আর এই উড়ালপুল নির্মাণ হয়ে গেলেই ডানকুনির যানজটের বদনাম একেবারে মুছে যাবে বলে জানান সুবীর বাবু।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন।