এ যেন অনেকটা ভুতুড়ে কাণ্ডের মতো! কৃষি দফতরে চাকরির জন্য আবেদন করার ৭ বছর পর ডাকযোগে চাকরির পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড পেলেন কর্মপ্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অ্যাডমিট কার্ড হাতে পেয়েই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় আশিসের। কৃষি দফতর নাকি ডাক বিভাগ…কাদের ব্যর্থতায় এমন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটলো তা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না ওই কর্মপ্রার্থী। যদিও এই ঘটনার পিছনেও দুর্নীতি দেখছেন বিরোধীরা।
বর্ধমান শহরের নারকেলডাঙা এলাকার বাসিন্দা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ২০১৬ সালে কৃষি দফতরে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ 'কর্মক্ষেত্র' পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্য কৃষি দফতরে 'কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক' পদে ৮১৮ জনকে নিয়োগ করা হবে বলে উল্লেখ ছিল। ওই পদে আবেদন করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি রাখা হয়েছিল ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। বিজ্ঞপ্তি নম্বর ছিল ০৪/WBSSC/২০১৬। বেতনক্রম ৫৪০০-২৫২০০ টাকা বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল। তা দেখে কর্মপ্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৬ সালেই ওই পদে আবেদন করেন।
আরও পড়ুন সিঙ্গুর-পর্বের ১৫ বছর পার: “টাটাদের ক্ষতিপূরণ, ক্ষমতায় তৃণমূল, আমাদের কী হবে?”
বৃহস্পতিবার আশিস বলেন, "আমি ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করার পর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় ৭ বছর। কিন্ত এতদিন ওই চাকরির পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড বা আনুসাঙ্গিক কিছু আমার কাছে আসেনি। কিন্তু হঠাৎই ১ নভেম্বর দুপুর ১টা নাগাদ ডাকযোগে কৃষি দফতরের সেই পরীক্ষার একটি অ্যাডমিট কার্ড আমি হাতে পাই। অ্যাডমিট হাতে পেয়ে প্রথমে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ি। কিন্তু খাম খুলে অ্যাডমিট কার্ডটি ভালো করে পড়তেই আমি হতবাক হয়ে যাই।"
কেন হতবাক হয়ে গেলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আশিস বলেন, “ওই চাকরির পরীক্ষা হয়ে গেছে প্রায় ৭ বছর আগে। ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর পরীক্ষা হয়ে গেছে । অথচ সেই পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড আমি পেলাম প্রায় সাত বছর বাদে।" এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। কার ভুলে তাঁকে এই খেসারত দিতে হল তা প্রকাশ্যে আসুক, সেটাই চাইছেন আশিস।
আরও পড়ুন- “মমতা-অভিষেক সব জানেন’, ফাঁসলেন কীভাবে? রাখঢাক উড়িয়ে সাফ কথা বালুর
এদিকে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক বিতর্কও চরমে উঠেছে। এই ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলগুলি একযোগে শাসকদল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের অভিযোগ, “রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্র ও পুরসভা-সহ একাধিক জায়গায় নিযোগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটাই
হয়েছে। যাঁরা ওই পদে চাকরি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন তাঁদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবেই বাদ দিতে দলের লোককে চাকরি পাইয়ে দিতে এমন কৌশল নেওয়া হয়েছিল কিনা তার তদন্ত প্রয়োজন।"
আরও পড়ুন- সিঙ্গুর-পর্বের ১৫ বছর পার: “টাটাদের ক্ষতিপূরণ, ক্ষমতায় তৃণমূল, আমাদের কী হবে?”
যদিও শাসকদলের সাফাই, এটা ডাকযোগে এসেছে। যদি কোনও গলদ থাকে তাহলে সেখানেই হয়েছে। রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “আগে দেখতে হবে দোষ কার। এতো এসেছে ডাক যোগে। তাই ডাক বিভাগেরই ভুল নাকি সেই বিষয়টি দেখতে হবে।”