চন্দ্রবাবু নাইডুর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্ধ্র প্রদেশের পরে বাংলা। নবান্ন সূত্রে খবর, চন্দ্রবাবু যে ভাবে তাঁর রাজ্যের মামলায় সিবিআই-এর 'নাক-গলানো'-র উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, সেই পথেই হাঁটলেন মমতা। 'What Andhra thinks today, Bengal thinks tomorrow’... এই পথেই এগোল চিত্রনাট্য।সিবিআই-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হল বাংলাতেও।
চন্দ্রবাবু ঠিক কী করেছেন? আইনগত ভাবে কতটা বিধিসম্মত দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থার উপর এই নিষেধাজ্ঞা? আইনের কচকচিতে না গিয়ে সোজা বাংলায় ব্যাখ্যা হল, যে সব মামলায় আদালত, সে হাইকোর্টই হোক বা সুপ্রিম কোর্ট, সিবিআই-এর উপর তদন্তভার দেয়, সেখানে রাজ্যের অনুমতি অপ্রাসঙ্গিক। যতই আপত্তি থাক রাজ্যের, কিছু করার থাকে না আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে।
কিন্তু করার থাকে সেই সব মামলায়, যেখানে আদালতের আদেশ ছাড়াই সিবিআই কোন রাজ্যের কোন মামলার তদন্তভার নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে এবং স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে শুরু করে তদন্ত। এই সব ক্ষেত্রে রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন, আইনি পরিভাষায় 'general consent'। সেই অনুমতি আর সিবিআই-কে রাজ্যের কোন মামলায় দেওয়া হবে না, এটাই চন্দ্রবাবুর নিদান। ইচ্ছে হল, আর তদন্ত শুরু করলাম, সেটা আর হবে না।
আরও পড়ুন: অন্ধ্রে সিবিআই প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, পরোক্ষে সমর্থন মমতার
চন্দ্রবাবুর মডেলে পূর্ণ সমর্থন জানাতে বিন্দুমাত্র দেরি করেন নি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়, যিনি সিবিআই-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার বিষয়ে অতীতে একাধিকবার সরব হয়েছেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। যিনি গতকাল কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় কোর কমিটির বর্ধিত সভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, "চন্দ্রবাবু নাইডু তো ভুল কিছু বলেননি। যা পরিস্থিতি চলছে, তাতে আমাদেরও আইন ঘেঁটে দেখতে হবে।" বার্তা স্পষ্ট, অন্ধ্র-মডেল মনে ধরেছে মমতার, যিনি এখন বিজেপি-বিরোধী জোটের অন্যতম কাণ্ডারী। এবং ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার কাজটাও দ্রুত সেরে ফেলল মমতার নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রত্যাহৃত হল 'সাধারণ সম্মতি' বা 'general consent’।
সোমবার চন্দ্রবাবুর কলকাতায় আসার কথা, বৈঠকের কথা মমতার সঙ্গে। মমতার দিল্লি যাওয়ার কথা আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি, রাজধানীর অন্ধ্র ভবনে চন্দ্রবাবু আয়োজিত বিজেপি-বিরোধী দলগুলির সমন্বয়-বৈঠকে যোগ দিতে। এই আবহে সিবিআই-কে ব্রাত্য করার মডেলে চন্দ্রবাবুর প্রতি মমতার সমর্থন মোদী-বিরোধী আন্দোলনের পালে নতুন করে হাওয়া লাগাল বলেই মনে করছে দেশের রাজনৈতিক মহল।
১৯৮৯ সালের বাম জমানায় রাজ্যে স্বাধীনভাবে তদন্ত করার জন্য সিবিআইকে সাধারণ সম্মতি দেওয়া হয়। এ রাজ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি পরবর্তী সময়ে সিবিআই তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, গ্রেপ্তারও করেছে। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারিতে জেল খাটতে হয়েছে একসময়ের মন্ত্রী মদন মিত্র, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ তাপস পাল সহ অনেককেই। শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে সিবিআই।