SandeshLhali Nirapada Sardar: হাইকোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলমুক্ত হলেন সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিআইএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। মঙ্গলবার সন্ধ্যা প্রায় সওয়া ছ'টা নাগাদ জেলের বাইরে বেরিয়ে আসেন এই বাম নেতা। ততক্ষণে বসিরহাট জেলের বাইরে ভিড় লাল নেতা, কর্মীদের। নিরাপদ কয়েক কদম এগোতেই তাঁর গলায় গাঁদার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। ওঠে স্লোগান। সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার ঝলকানিতে তখন নিরাপদ বলছেন, 'এ ভাবে জেলে পুড়ে সন্দেশখালির মুখ আটকাতে পারবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পুলিশ। অন্যায়, অত্যাচারের প্রতিবাদের জবাব দিচ্ছে সন্দেশখালির মানুষ।'
জেলমুক্ত হয়ে এদিন নিরাপদ সর্দার মমতা প্রশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। বলেছেন, '২০১৩ সালে থেকে বিধানসভা বলে এসেছি যে, সন্দেশখালির জমি অন্য়ায়ভাবে তৃণমূলের মস্তানরা দখল করে নিচ্ছে। মা, বোনেদের ইজ্জত লুঠ হচ্ছে। ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তখন আমার মুখ থেকে মাইক কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তৃণমূল সরকার কর্ণপাত করেনি। এখন প্রমাণিত আমার কথাই সত্যি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকতেই সন্দেশখালির মানুষ পথে নেমেছে।' তাঁর অভিযোগ, 'জেলে গিয়ে ভাল-মন্দ অভিজ্ঞতা হল। দেখলাম যে জেলে সব থেকে বেশি সংখ্যায় বন্দি নতুন প্রজন্ম। এঁরা তো আমাদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু, মমতা সরকারকে হাঁস, মরুগি চুরির মত মামলায় জেলে ভরে দিয়েছে। গোটা রাজ্যজুড়ে এভাবেই মমতা ব্যানার্জীর প্রশাসন ছাত্র, যুবদের মেরুদণ্ঢ ভাঙতে চাইছে।'
এদিনও নিরাপদ দাবি করেছেন যে, শেখ শাহজাহানদের গার্ড দিচ্ছে পুলিশ ও মমতা সরকার। তাঁর কথায়, 'এখন সব হাতে বাইরে। তাই বলছে সাত দিনের মধ্যে শেখ শাহাজাহান গ্রেফতার হবে। এসব ইয়ারকি তৃণমূলের। কেন ৫ জানুয়ারির পর থেকেই পুলিশের দমন-পীড়ন চালু হল। এইসবের জন্য তৃণমূল সরকার ও পুলিশ দায়ী।'
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee: দুয়ারে লোকসভা, জেলা থেকে চমকে দেওয়া ঘোষণা মমতার
এরপরই বিস্ফোরক দাবি করেন নিরাপদ সর্দার। জেলের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বলেন, 'শিবু হাজরা গতকাল আমার কাছে এসেছিল। কোর্ট লকআপে তৃণমূল নেতারা হুমড়ি খেয়ে পায়ে পড়ছে। বলছে বাঁচান। শিবুকে আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন ৫ ফেব্রুয়ারি যেসব মহিলারা তোমার কাছে এসেছিল তাঁদের টাকা দাওয়ানি? কেন বিগত তিন বছর ধরে টাকা ফেরাওনি? কেন ১০০ দিনের টাকা লুঠ করেছো? এখন তোমার নেতারা বলছে টাকা ফেরৎ দেব। আসলে চোরোদেরকে গার্ড করার জন্য এসব বলছে। আসলে এটা মমতা ব্যানার্জীর প্রলেব দেওয়ার চেষ্টা, গোটা রাজ্যে ষেখানেই এসব হয়েছে সেখানেই তিনি এই প্রলেপ দিয়েছেন। সন্দেশকালিতেও সেই চেষ্টা চলছে।'
সন্দেশখালিতে মন্ত্রীরা যেতে পারছেন, কিন্তু বাম সহ রাজনৈতিক বিভিন্ন দলকে আটকানো হচ্ছে। এটা কীসের নিয়ম? প্রশ্ন তুলেছেন সন্দেশকালির প্রাক্তন বাম বিধায়ক। অত্যাচার চললে সন্দেশখালি এভাবেই সোচ্চার থাকবে বলে এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নিরাপদ সর্দার।
সন্দেশখালি মামলায় ধৃত সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে মঙ্গলবারই জামিন দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বরের ডিভিশন বেঞ্চ। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল, মঙ্গলবারই নিরাপদ সর্দারকে জেল থেকে মুক্ত করতে হবে। তা না হলে পুলিশ আদালত অবমাননা করবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বিচারপতিরা সাফ জানিয়েছেন যে, এতদিন নিরাপদ সর্দারকে যেভাবে আটকে রাখা হয়েছে তা সঠিক নয়। এভাবে কাউকে আটকে রাখা যায় না।
এদিনের শুনানিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সন্দেসখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই মামলায় পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র দায়ের হয়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু পুলিশের তরফে এফআইআর দায়ের হয় ৯ তারিখ। অভিযোগ জমা পড়ার আগেই কীভাবে এফআইআর দায়ের হয়ে গেল? পুলিশের এই কাণ্ডে হতবাক বিচারপতিরা। এরপরও পুলিশের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ হবে না, সেই প্রশ্ন করেছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। বক্তব্য, যেভাবে এতদিন নিরাপদ সর্দারকে আটকে রাখা হয়েছে তার প্রক্রিয়া সঠিক নয়। এভাবে কাউকে টানা ১৭ দিন আটকে রাখা যায় না।