উৎসবের মরসুমে ভিড় বেড়েছে বাজরগুলোতে। সভা-সমাবেশ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনও বালাই নেই। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিনে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। দুর্গা পুজোর পরে সংক্রমণের এই বৃদ্ধি 'সুনামি'র রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের এক সংগঠনের। ইতিমধ্যেই এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে চিকিৎসকদের ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে। উৎসবের মরসুমে ভিড় রোধ এবং মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করতে চিঠিতে আর্জি জানিয়েছে চিকিৎসকদের ওই সংগঠন।
গত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলায় অ্যাকটিভ করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমছে সুস্থতার হার। যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে চিকিৎসকদের। গত ৭ সেপ্টেম্বর চিকিৎসকদের সংগঠন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংক্রমণ রুখতে পুজোয় কঠোর হাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আবেদন জানানো হয়েছে। চিঠিতে কেরালার ওনাম ও মহারাষ্ট্রের গণেশ চতুর্থী পালনের যেমন উল্লেখ রয়েছে, তেমনই স্পেনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও ফুটবল ম্যাচের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। এইসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করায় করোনা সংক্রমণের হার বিপুল হারে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
পুজোর পর পশ্চিমবঙ্গে যাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি না হয় তার জন্যই ভিড় নিয়ন্ত্রণের কথা বলে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, কঠোরভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা না হলে দুর্গা পুজোরে পর সংক্রমণ সুনামি'র আকারে ছড়িয়ে পড়বে। চিঠির সঙ্গে চলতি মাসের প্রথম দিকের কয়েকটি দিনের কলকাতায় সংক্রমণের পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিখিৎসকরা।
চিঠিতে লেখা রয়েছে, 'দুর্গা মণ্ডপে ভিড় রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আর্জি জানানো হচ্ছে। বাড়ির বাইরে পা রাখলেই যেন মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত রুখতে এই দুই নিয়ম যেন কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।'
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর আহ্বায়ক পূণ্যব্রত গুণ বলেছেন, 'মহালয়া, বিশ্বকর্মা পুজোর পরই বাংলায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। যা উদ্বেগজনক সংকেত। স্বাস্থ্যবিধিকে তাচ্ছিল্য করে ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিয়ে ওনাম উৎসব পালন হয়েছে কেরালায়। তারপরই সেখানকার পরিস্থিতি খারপ হয়েছে। উৎসবের সঙ্গেই রাজনৈতিক সভা-সমাবেশও বেড়েছে। যা থেকেও সংক্রমণ বাড়তে পারে।' তাঁর কথায়, 'বাংলাতে ঈদ, মহরমে ভিড় জমতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে রয়েছে কেরালা, মহারাষ্ট্রের উদাহরণ। সেখান থেকে শিক্ষা না নিয়ে যদি কঠোর পদক্ষেপ না করা হয়, স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয় তবে তা হবে আত্মাঘাতী সিদ্ধান্ত। সুনামির মত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। সবকিছু হাতের বাইরে চলে যাবে।'
রাজনৈতিক দলগুলোকেও একই আর্জি জানিয়ে চিঠি লেখার পরিকল্পনা করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস। সংগঠনের আহ্বায়ক পূণ্যব্রত গুণ জানিয়েছেন, 'আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা প্রতিটা রাজনৈতিক দলের কাছেই চিঠি দিয়ে জানাব। মানুষের কাছে তাঁদের ব্যাপ্তি সবচেয়ে বেশি। তাই উৎসবে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো যাতে আবেদন করেন তার আর্জি জানাব। এছাড়া, দলগুলোর কর্মসূচিতেও যাতে বিধি মানা হয় সে কথাও তুলে ধরব।'
মণ্ডপে ভিড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা মেনে নিয়ে নিয়েছেন রাজ্য সরকারের পরমার্শদাতা বোর্ডের সদস্য ডাঃ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, 'ওনাম ও গণেশ চতুর্থীর পর কী হয়েছিল তা সবার জানা, সেখান থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। ফলে পুজোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আবশ্যিক।'
সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে ননা পড়ে তার জন্য পুজোয় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে লাদুর পক্ষে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেছেন, 'সতর্কতার সঙ্গে আমাদের বিধি মানতে হবে। তা না হলেই করোনা বাড়বে। উৎসবের আনন্দ অন্ধকারে পরিণত হবে।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন