Advertisment

Motivational Story: দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই জারি বঙ্গ তনয়ার, মাস্টার্স করে ঠেলাগাড়িতেই শুরু স্বপ্ন বোনার পালা

বাবা ড্রাইভার, মায়ের ব্রেইন স্ট্রোক। বাবা-মাকে ভাল রাখতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই জারি রেখেছেন বছর ৩০-এর এই তরুণী। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঠেলা গাড়িতে করে খাবার বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন সংস্কৃতে মাস্টার্স করা এই মেয়েটা।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
motivational story, কেয়া ব্রক্ষ্ম, ফুড রিচার্জ, inspirational story, good news, এম করে রাস্তায় বঙ্গ তনয়া, বাংলা খবর, ট্রেন্ডিং, viral, social media, google news, face book news, human interest story, soft news,

কেয়া ব্রক্ষ্ম

সাধারণের মাঝে থেকে কিছু মানুষ তাদের নিজেদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অসাধারণ হয়ে ওঠেন। তেমনই একজন সোদপুরের কেয়া ব্রক্ষ্ম।

Advertisment

বাবা ড্রাইভার, মায়ের ব্রেইন স্ট্রোক। তাই বাবা-মাকে ভাল রাখতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই জারি রেখেছেন বছর ৩০-এর এই তরুণী। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঠেলা গাড়িতে করে খাবার বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন সংস্কৃতে মাস্টার্স করা এই মেয়েটা, কেয়া ব্রহ্ম। অনুপ্রেরণার আরেক নাম হয়ে উঠেছেন তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করতে করতে কিছু মানুষের জীবন সংগ্রামের কাহিনী আমাদের অবাক করে। তাদের সংগ্রামের কাহিনী চোখে জল এনে দেয়। তাদেরই একজন এই কেয়া ব্রহ্ম। যার লড়াইয়ের কাহিনী চোখে জল আনতে বাধ্য।

বরাবরই মেধাবী ছাত্রী কেয়া বর্তমানে সোদপুরের সুখচর কবিরাজ বাড়ির মোড়ে ফুড রিচার্জ নামে একটি খাবারের দোকান চালাচ্ছে স্রেফ পরিবারকে ভাল রাখতে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। সংস্কৃতে মাস্টার্স করা মেয়েটাকে আজ সংসার চালাতে নির্ভর করতে হয়েছে ঠেলাগাড়ির উপর। এটাকে ঠিক দোকান বললে ভুল বলা হবে। একটা স্টল চালান তিনি। তাতেই সকালের জল খাবার থেকে দুপুরে লাঞ্চ সবটাই রয়েছে।

অসুস্থ মাকে সঙ্গে নিয়ে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে নিজে ও পরিবারকে একটু ভাল রাখার চেষ্টা করছেন কেয়া। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেকই রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেলেও যারা নিঃশব্দে জীবন যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কতজনের কথাই বা আমাদের সামনে আসে?

সোদপুরের সুকচর পঞ্চানন তলা রোডের বাসিন্দা কেয়া। ছোট থেকে অভাব দেখে বেড়ে ওঠা। কেয়ার বাবা কাঞ্চন ব্রক্ষ্ম পেশায় ড্রাইভার। গাড়ি চালিয়ে কেয়া ও দশ বছরের বড় দাদাকে মানুষ করেছেন তিনি।ছোট থেকে ভাল পড়াশুনায় কেয়া।

সোদপুরের সুকচর শতদল হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউট থেকে সংস্কৃতে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে। এরপর কেয়াকে পড়ানোর মত খরচ বাবা জোগাতে পারেন নি। কিন্তু গ্রাজুয়েশনের পর পড়াশুনা বন্ধ করতে চান নি কেয়া। নিজে টিউশন পরিয়ে টাকার জোগাড় করে বরীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে মাস্টার্স করেন। কিন্তু এমএ করার পর চাকরি কোথায়?

তাই কেয়ার মা তার কিছু সোনা বন্ধক দিয়ে মেয়েকে মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভের কোর্সে ভর্তি করান মেয়েকে। কোর্স শেষে একটা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি জোটে ঠিকই কিন্তু সেটাও বেশিদিন টেকে না। বেশ কিছু চাকরির পর কোম্পানি কেয়া সহ বেশ কয়েকজন কর্মীকে ছাঁটাই করে দেয়।

এদিকে সেই সময় বাড়ির অবস্থাও খারাপ। বয়স্ক বাবার পাশে দাড়াতে র‍্যাপিডো, ওলা বাইক চালিয়ে সংসারের হাল কিছুটা হলেও ফেরানোর চেষ্টা করেন কেয়া। কিছু সমাজের বাঁকা নজরে পড়ে ফের চাকরির চেষ্টা করেন কেয়া। জুটেও যায় একটি চাকরি। কিন্তু কথায় আছে ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে কোন কিছু সম্ভব হয়। এবার একদিন অফিস যাওয়ার সময় ঘটে দুর্ঘটনা। একথা শুনে মায়ের ব্রেইন স্ট্রোক হয়। বেশ কিছুদিন যেন কেয়ার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়।

এবার কেয়া ঠিক করেন আর চাকরির খোঁজ করবেন না। সুকচর পোস্ট অফিসের সামনে কেয়া একটা খাবারের দোকান দেন। মেয়েকে মনের জোর দিতে, তাকে হাতে হাতে কছু সাহায্য করতে রোজই অসুস্থ শরীরে দোকানে আসেন মা। কেয়া বলেন, 'দোকানটা একটু দাঁড়িয়ে গেলে বাবাকে আর গাড়ি চালাতে দেব না'। কারুর থেকে কোন সাহায্য নিতে চান না কেয়া । বাবা-মা-পরিবারের জন্য কেয়ার এই লড়াই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে লাখো মানুষকে।

kolkata news
Advertisment