স্কুল থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকেই ক্রমশ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন দুর্গাপুরে কাঁকসার মলানদিঘির বিষ্ণুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু অবসরের এক যুগ পরেও স্কুলের প্রতি আজও তাঁর প্রবল টান। সেই টান এতটাই যে দু'চোখের অন্ধকারকে পাশে ফেলে প্রত্যেকদিন স্কুলে পড়াতে আসেন সত্তরোর্ধ্ব শিক্ষক রবিলাল গড়াই। স্কুলের কচিকাঁচা পড়ুয়াদের হাত ধরেই প্রতিদিন স্কুলে আসেন সকলের প্রিয় 'হেড মাস্টারমশাই'।
সাতাশ বছর ধরে দুর্গাপুরের কাঁকসার মলানদিঘির বিষ্ণুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন রবিলাল গড়াই। কাঁকসারই বিষ্টুপুরের বাসিন্দা রবিলালবাবু ১২ বছর আগে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে অবসরের আগে থেকেই চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন রবিলালবাবু। পরবর্তীকালে চিকিৎসা করিয়েও বিশেষ উপকৃত হন নি তিনি। অবসর গ্রহণের পর ক্রমেই হারাতে থাকেন দৃষ্টিশক্তি। এরপর একদিন দু'চোখে নেমে আসে অন্ধকার। কিন্তু সারা জীবন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসা মানুষটাকে কি আর অন্ধকার বেঁধে রাখতে পারে? দৃষ্টি হারানোর কথা মাথায় না রেখেই অবসরের পরও তিনি দিব্যি স্কুলে পড়িয়ে চলেছেন।
কী বলছেন দুর্গাপুরের দৃষ্টিহীন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রবিলাল গড়াই?https://t.co/I4HBeRAoo9 pic.twitter.com/4s3ulAFiik
— IE Bangla (@ieBangla) August 10, 2019
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে রবিলালবাবু বলেন, "আমার নাতি নাতনিরা হাত ধরে স্কুলে নিয়ে আসে, আবার হাত ধরে বাড়ি নিয়ে যায়। অবসরের পর যেটুকু পেনশন পাই তাতেই চলে যায়। আমি এই স্কুলে ২৭ বছর চাকরি করেছি, তারপর অবসর নেওয়ার পরও প্রত্যেকদিন স্কুলে এসেছি। অবসর গ্রহণের চার বছর পর আমি একেবারেই দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ি। তবে স্কুলের বর্তমান মাস্টারমশাইরা আমাকে খুবই শ্রদ্ধা করেন। এই ভাবেই স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও মাস্টারমশাইদের নিয়ে আমি আমার বাকি জীবনটা পার করে দিতে চাই।"
চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন একযুগ আগে, কিন্তু এখনও শিক্ষকতা করে যান সত্তর বছরের রবিলাল গড়াইhttps://t.co/I4HBeRAoo9 pic.twitter.com/T4rNL1hxf3
— IE Bangla (@ieBangla) August 10, 2019
কাঁকসার স্কুলটির বর্তমান প্রধান শিক্ষক বলেন, "রবিলালবাবু ২০০৬ সালে অবসর নেওয়ার পর আমি এখানে আসি। সেই প্রথম দিন থেকেই দেখছি, উনি প্রতিদিন স্কুলে আসেন। এই স্কুলের গাছগুলিকে উনি নিজের হাতেই যত্ন করেন এখনও। স্কুলের প্রতি ওঁর যে ভালবাসা, তা বলে বোঝানো যাবে না। স্কুলের যে কোনও অনুষ্ঠান ওঁকে ছাড়া ভাবাই যায় না। দৃষ্টিহীন হয়ে পড়লেও যেভাবে তিনি এখনও ক্লাস নেন, তাতে আমরা ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ।"
আজ শিক্ষক দিবসে এই অক্লান্ত যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন স্কুলের ছোটবড় সকলেই।