মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যয় সিকিম। তিস্তা সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি। ভেঙেছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ড্যাম। সিকিম ও বাংলার দার্জিলিং পেরিয়ে তিস্তা জলপাইগুড়ি জেলায় সমতলে প্রবেশ করছে। ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে উত্তরবঙ্গবাসীর। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিবকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে নিজেই সেখবর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর?
মতা মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার জন্য। যাতে উদ্ধারকাজে রাজ্যের তরফে সমস্ত রকম সহায়তা করা যায়। তিস্তা সিকিম থেকে নেমে এসেছে উত্তরবঙ্গে। সেখানে যাতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে না যায় সে জন্যও প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কালিম্পং, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির নীচু এলাকা থেকে মানুষকে সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নবান্নের তরফ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পেয়েই রাজ্যের সিনিয়র মন্ত্রী এবং সিনিয়র আইএএস আধিকারিকরা উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা হয়েছেন।
এক্স হ্যান্ডেলে কী লিখেছেন মমতা?
'সিকিমে আকস্মিক মেঘ ভাঙা বৃষ্টিরপর বন্যায় ২৩ জন সেনা নিখোঁজ হওয়ার খবরে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই বিষয়ে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সমবেদনা প্রকাশ এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময়, আমি উত্তরবঙ্গের সকলকে বর্তমান মরসুমে বিপর্যয় মোকাবিলায় সর্বাধিক সতর্কতা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করছি। ইতিমধ্যেই আমার মুখ্য সচিবকে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার প্রস্তুতি করতে বলেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমন্বয় করতে বলেছি। কালিম্পং, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রাজ্যের সিনিয়র মন্ত্রী এবং সিনিয়র আইএএস অফিসারদের উদ্ধার ও ত্রাণ তদারকির জন্য উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে। এই ভয়াবহ দুর্যোগে যাতে প্রাণহানি না হয় সেজন্য কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।'
নবান্নের বৈঠকে মমতার বক্তব্য-
দুর্যোগ মোকাবিলায় এ দিন নবান্নে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। সেখানে ভার্চুয়ালভাবে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন। প্রয়োজননীয় সব ব্য়বস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। সিকিম থেকে দার্জিলিং হয়ে তিস্তা যেহেতু জলপাইগুড়িতে প্রবেশ করেছে তাই ওই জেলার অবস্থা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বন্যা পরিস্থিতির জন্য আপাতত সরকারি কর্মীদের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদা জেলা নিয়েও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। খোলা হচ্ছে কনট্রোল রুম।
কী অবস্থা সিকিমের?
বুধবার ভোরে উত্তর সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টির জন্য বিপুল জল ধরে রাখতে না পারায় লোনক হ্রদ ফেটে গিয়েছে। ফলে ওই হ্রদের জল তিস্তার বুক দিয়ে বইতে শুরু করেছে। এর জেরে সেই সময় সিকিমে তিস্তার জলস্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। নদীর দু'কুল ছাপিয়ে নীচের দিকে নামতে থাকে সেই জল। জলের প্রবল বেগে তিস্তার আশপাশের কিছুই আর অক্ষত নেই। নদীর কাছাকাছি সেনাছাউনি ভেসে গিয়েছে। নিখোঁজ ছাউনির ২৩ জন সেনা জওয়ান। জলের তোড়ে ভেসে যায় সেনার ৪১টি গাড়ি। তিস্তার হড়পা বানে বহু সাধারণ মানুষও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বলে খবর। ভেঙে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি, রাস্তা। সিকিমের সঙ্গে বাংলা তথা অবশিষ্ট ভারতের মূল সংযোগরক্ষাকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ তিস্তার গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে।
কেমন আছে জলপাইগুড়ি?
তিস্তার বিপুল পরিমাণ জল ক্রমশ এগিয়ে আসছে উত্তরবঙ্গের দিকে। ফলে জলপাইগুড়ি জেলা-সহ গোটা উত্তরবঙ্গেই বন্যা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে তিস্তায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- মেঘভাঙা বৃষ্টি-হড়পা বানে ভেসে গেল ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক, গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন সিকিম