দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার তৃণমূল। আদালতে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা। তার মধ্যেই সাগরদিঘী উপনির্বাচনে পরাজয়। সংখ্যালঘু ভোটেও থাবা। অথচ সামনের পঞ্চায়েত ও লোকসভায় ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তৃণমূল। তাই একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোটের বাণ মোকাবিলায় সংগঠনে রদবদল করল ঘাস-ফুল শিবির। জেলা ধরে ধরে এক এক মন্ত্রী, নেতাকে নজরদারি নিয়োগ করা হল। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের প্রধানের দায়িত্বেও রদবদল করা হল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলের পদাধিকারী, সাংসদ ও বিধায়কদের বৈঠকের পর দলীয় সংগঠনে রদবদলের কথা ঘোষণা করেছেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তখনই সামনে আসে তৃণমূলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বের বিষয়টি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নজরদাতাদের পর্যবেক্ষক বলে মানছে না শাসক শিবির।
জানা গিয়েছে, বর্ধমান, নদিয়া ও দার্জিলিং জেলায় দলের তরফে নজরদারি করবেন অরূপ বিশ্বাস। হাওড়া, হুগলির দায়িত্বে ফিরহাদ হাকিম। পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার দায়িত্বে মলয় ঘটক। দক্ষিণ দিনাজপুর দেখবেন তাপস রায়। এছাড়া, মালদা ও মুর্শিদাবাদ দেখবেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও মোশারফ হোসেন।
যে যে জেলায় নজরদারিতে নেতা, মন্ত্রীদের কাজে নিয়োগ করল দল সেখানেই নানান কারণে শাসকদলের অস্বস্তি বেড়েছে। যেমন হুগলির দুই নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষ দুর্নীতি মামলায় জেলে। সেখানে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ববিকে। আবার জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় যেখানে গত উনিশের ভোট থেকেই তৃণমূলের খারাপ ফল হচ্ছে সেখানে পাঠানো হয়েছে মলয় ঘটককে। দক্ষিণ দিনাজপুরের দায়িত্ব পেয়েছেন তাপস রায়। পাহাড়ে অরূপ বিশ্বাস।
এদিকে, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরই তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ধস শুরু হয়েছে বলে নানা চর্চা। সাগরদিঘি পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে ইতিমধ্যেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারপরও তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের দায়িত্ব দেওয়া হল মোশারফ হোসেনকে। এই পদে আগে ছিলেন হাজী নুরুল। তাঁকে এখন থেকে সামলাতে হবে ওই সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব।
তৃণমূলে অবজার্ভার বা পর্যবেক্ষক পদ নিয়ে টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। বিতর্ক এড়াতে খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই পদটি তুলে দিয়েছিলেন। যা নিয়েই চূড়ান্ত ক্ষোভ ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। প্রকাশ্যে এবং দলের অন্দরে যা নিয়ে অসন্তোষের কথা একাধিকবার তুলে ধরেছিলেন তিনি। ফলে ‘অবজার্ভার’ পদটি তৃণমূল স্পর্শকাতর। কয়েকদিন আগেও সংগঠনে অবজার্ভার পদ ফেরানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাজ্যের শাসক দল। তারও আগে মমতা জানিয়েছিলেন তিনিই গোটা বাংলায় দলের অবজার্ভার। ঘোষণা করেন, প্রশাসনিক কাজের ব্যস্ততায় দলের কাজ পুরোপুরি দেখতে পারেননি। তাই এবার থেকে দলের কাজেই বেশি মন দেবেন। কিন্তু, নামে না হলেও সংগঠন পোক্ত করতে সেই নজরদারি প্রথাতেই ফিরল তৃণমূল।
আরও পড়ুন- 'রাহুলকে মোদির বিরোধী বানাতে চাইছে বিজেপি', ফাঁস করল তৃণমূল