কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের তুলির টান। বিদেশি ধাঁচে তৈরি হওয়া বারুইপুরের আধুনিক সংশোধনাগার আলিপুরের থেকে অনেক বেশি উন্নত। আগামী বুধবারই এই সংশোধনাগারের উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংশোধনাগার উদ্বোধন করবেন। এখনও অবধি যা খবর তাতে তিনি নবান্ন থেকেই বারুইপুর সংশোধনাগারের উদ্বোধন করবেন। বারুইপুরের টংতলায় ১৭ একর জমির উপর আধুনিকভাবে তৈরি এই সংশোধনাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আলিপুরের থেকে অনেক উন্নত করা হয়েছে। এখন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। উদ্বোধনের পাশাপাশি আলিপুরের বন্দি স্থানান্তরিত করা হবে। যদিও সংশোধনাগারের উদ্বোধন এবং বন্দি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে সেই বিষয়টি স্থির হলেও এখনও বারুইপুর সংশোধনাগারের কাজকর্ম বাকি রয়েছে বলে খবর।
প্রশাসন সূত্রে খবর, আলিপুর থেকে ৫০ জন বাছাই করা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি, ১০ জন অভিজ্ঞ ও দক্ষ কারারক্ষী, ২ জন কারা অফিসার এবং ১ জন কারা আধিকারিককে নিয়ে এই সংশোধনাগারের পথ চলা শুরু হবে। তার পর পর্যায়ক্রমে আলিপুর থেকে বাকি বন্দিদের বারুইপুরে স্থানান্তরিত করা হবে। কারারক্ষী ও আধিকারিকরাও আসবেন। তাঁদেরও এখানে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে,বারুইপুরে আধুনিক সংশোধনাগারের সব সুবিধাই রাখা হচ্ছে। সেখানকার রান্নাঘরে থাকছে রুটি তৈরির মেশিন এবং ভাত-ডাল রান্নার জন্য আধুনিক ব্যবস্থা। এর ফলে রান্নাঘরে লোকবল কম লাগার পাশাপাশি খাবারও অনেক স্বাস্থ্যসম্মত হবে বলেই মত কারা দফতর কর্তাদের। সংশোধনাগারের মধ্যে একটি প্রেক্ষাগৃহও তৈরি হয়েছে। বন্দিদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে সেখানেই।
আরও পড়ুন, রথ আটকালে আদালতে যাবেন, হুমকি দিলীপ ঘোষের
বারুইপুরের এই সংশোধনাগারটি রাজ্যের অন্য সংশোধনাগারগুলি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধাঁচে তৈরি হয়েছে। টংতলায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সাদা আর নীল রংয়ের বিশাল বিশাল বাড়ি। ১৭ একর জমির ওপর এরকম ৮–১০ টি ভবন তৈরি হয়েছে। এই ভবনগুলিতে মোট ২৪ টি সেল তৈরি হয়েছে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তদের জন্য। আর বিচারাধীন বন্দী ও সাজা প্রাপ্ত বন্দীদের জন্য তৈরি হয়েছে ১৮ টি সেল। মহিলাদের জন্য আলাদা সেলও থাকছে। বারুইপুর– আমতলা রুটের রাস্তা ধরে কিছুটা গেলেই টংতলা। আর সেখানেই তৈরি হয়েছে নতুন সংশোধনাগার। চাকারবেড়িয়া গ্রামের গা ঘেঁষে সংশোধনাগারের বিশাল পাঁচিল উঠছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংশোধনাগারের একতলা থেকে তিনতলা জুড়ে আধুনিক ঘর বানানো হয়েছে। সেই ঘরের সামনের দিকে লোহার দরজা দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে ঘরের ভিতরের সব কিছু যাতে দেখা যায় তেমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর পর এই ঘরগুলিতে বন্দীদের রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই সংশোধনাগারের বন্দীদের জন্য নানা রকমের আধুনিক ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সংশোধনাগারের মধ্যেই তৈরি করা হচ্ছে বন্দীদের খেলার মাঠ। তাদের শরীর চর্চার জন্য আধুনিক জিমেরও ব্যবস্থা থাকছে। যোগ ব্যায়াম চর্চা কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকছে। এমনকি সংস্কৃতি চর্চার জন্য অডিটোরিয়ামও তৈরি করা হয়েছে। থাকছে আধুনিক হাসপাতাল। আধুনিক রান্নার ঘর ও ডাইনিং রুম।
শুধু পুরুষদেরই নয়, এখানে মহিলা বন্দীদের রাখার ব্যবস্থাও থাকছে। তাদের জন্য আলাদা সেল তৈরি করা হয়েছে। সংশোধনাগারের সুরক্ষাতে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে খবর। সংশোধনাগারকে ঘিরে সুউচ্চ ২৫ ফুটের পাঁচিল থাকছে। আর আগে থাকছে ১৫ ফুটের পাঁচিল। থাকছে ওয়াচ টাওয়ারের নজরদারি। সি সি টিভি ক্যামেরাতেও নজরদারির ব্যবস্থা হচ্ছে। এছাড়াও লেজার সেন্সরের মতো আধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে। সংশোধনাগারে প্রায় দু হাজার লোকজন থাকার ব্যবস্থা থাকছে। এখন শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিক অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বারুইপুরের আধুনিক সংশোধনাগার।