জেল বদলি হল। কিন্তু সাথীকে ছাড়লেন না শংকর জয়সওয়াল। আলিপুর থেকে বারুইপুরে সঙ্গীকে নিয়ে এলেন তিনি। কর্তৃপক্ষ এতে দোষের কিছু পান নি।
খুনের ঘটনায় কারাবাস হয়েছে শংকরের। আলিপুর জেলেই এতদিন থাকতেন তিনি। তাঁর নতুন ঠিকানা বারুইপুর। আলিপুর সংশোধনাগারে থাকার সময়ে মাস সাতেক আগে একটি গাছ থেকে পড়ে যায় এক কোকিল শাবক। পড়ে যাওয়া শাবকটিকে নজরে পড়ে শংকরের। কুড়িয়ে নিয়ে সেবা যত্ন শুরু করেন পাখিটির। বললেন, ‘‘নিজের খাবার থেকেই ভাগ দিতাম একটু একটু করে। খাবার পেতে দেরি হলে ওর কষ্ট হয়।’’ শংকরের চিন্তা এখন কোকিল ছানা নিয়ে। ডানায় আঘাতের দরুণ সে পাখি উড়তে পারছে না। শংকর ভাবছেন কোনও পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেই উড়তে পারবে পাখি।
৫০ জন যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত বন্দিদের নিয়ে পথ চলা শুরু হল বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের। এবার স্যাঁতস্যেঁতে ঘুপচি ঘর ছেড়ে চোখ জুড়োনো সংশোধনাগারে আলোর পথ দেখবেন বন্দিরা। দেশের অন্যতম আধুনিক সুযোগ সুবিধাযুক্ত সংশোধনাগারের উদ্বোধন হল বুধবার। এদিন বারুইপুর ধোপাগাছিতে ১৮ একর জমির ওপর এই সংশোধনাগের উদ্বোধন হয়। নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের উদ্বোধন করলেও বারুইপুরে তার শুভ সূচনা করেন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও বিধানসভার অধ্যক্ষ তথা স্থানীয় বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিমানবাবু বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘‘এটি দেশের আধুনিকতম, নিরাপদ সংশোধনাগার। সংশোধনাগারের মূল উদ্দেশ্য সংশোধন করা। মানসিক সংশোধন সবচেয়ে জরুরী। এখান থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বন্দিরা বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। এখানকার রান্নাঘর, খাবার জায়গা, অডিটোরিয়াম সবই উন্নত মানের।‘’
এদিন আলিপুর, দমদম এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের বন্দিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। আগুনের পরশমণি থেকে শুরু করে বন্দে মাতরম গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করেন তাঁরা। বন্দিদের জন্য সংশোধনাগারের পাশেই ৯০ বেডের একটি হাসপাতাল তৈরি করা হবে খুব শীঘ্রই। তাছাড়া ফুটবল ,ভলিবল, ব্যাডমিন্টনের কোর্ট তৈরি করা হবে। থাকবে জিম, ট্রেনিং সেন্টার এবং হর্টিকালচার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার জয়া বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘আবাসিকদের চিকিৎসার জন্য আপাতত ২৫ টি বেড বরাদ্দ করা হয়েছে মহকুমা হাসপাতালে।‘’
এদিন বেশ কিছু বন্দিকে আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বারুইপুরে আনা হয়। প্রথমদিনই নতুন জায়গায় এসে রাজসিক পরিবেশ দেখে স্বভাবতই সবাই উচ্ছ্বসিত। বন্দিরা জানিয়েছেন এমন ব্যবস্থাপনা তাঁরা আগে দেখেননি। তবে শহর থেকে অনেক দূরে এর অবস্থান হওয়ায় কেউ কেউ মুষড়ে পড়েন। এক সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বলেন, এতদূরে পরিবারের লোক দেখা করতে আসবে কি করে? আর বিকালে দেখা করে ফিরবেই বা কি ভাবে? প্রথমদিন অবশ্য প্রাতরাশে অল্প চাউমিন কিংবা শৌচালয়ে জল না পেয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
পুলিশ অফিসার বিনোদ মেহেতা খুনে ধৃত মূল অভিযুক্ত মহঃ নাসিবকে আনা হয়েছে এখানে। ১৯৮৪ সালে গার্ডেনরিচে কর্তব্যরত অবস্থায় খুন হয়েছিলেন আই পি এস অফিসার বিনোদ মেহেতা। সেই ঘটনায় ধৃত মূল অভিযুক্ত মহঃ নাসিব ওরফে নাসো ১৯৮৫ থেকে টানা ৩৩ বছর সাজা কাটছেন। এদিন তিনি সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে মুক্তির আর্জি জানান।
নবনির্মিত সংশোধনাগার নিয়ে দরাজ সার্টিফিকেট দেন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, অতি অল্প সময়ে এই কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে কাজ এখনও অনেক বাকি আছে। কারা দপ্তর সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ে ৭৫ হাজার বর্গ ফুটের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যাতে ব্যয় হয়েছে ৭০কোটি টাকা। এখানে মোট ৮৫০ জন বন্দি ও ২৫০ জন কারা কর্মী থাকতে পারবেন।
এসবের মাঝে বন্দি শংকর জয়সওয়াল পশু চিকিৎসক খুঁজছেন। পোষ্য কোকিলকে মুক্তির আকাশ দেওয়ার জন্য। তার তো আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়নি, শংকরের মতন।