শুক্রবারই যুগান্তকারী নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই রাতেই শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুলেছেন কলকতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির ২টি মামলা তাঁর এজলাস থেকে সরিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত, এমনই দাবি আইনজীবীদের একাংশের। এপ্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, 'যে মামলা ৬ মাসে শেষ করতে চেয়েছিলাম, সেটায় যদি ৬০ বছর লেগে যায় তাহলে আমার কিছু বলার নেই।' আগামী দিনে তাঁর হাত থেকে বাকি মামলাগুলিও সরে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা বিচারপতির।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম এখন জানেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়াই বিরল। তাঁর একের পর এক নির্দেশে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ ঘিরে নজিরবিহীন দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হয়েছে। তবে এবার তাঁর হাত থেকেই নিয়োগ দুর্নীতির ২টি মামলা অন্য বিচারপতির কাছে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সকালে এই নির্দেশের পর রাতেই এবিষয়ে মুখ খুলেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
কী বলেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?
তাঁর কথায়, 'সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সবাইকে মেনে নিতে হবে। ব্যক্তিগত মন খারাপের যুক্তি নেই। আমি তো নিজে সরাচ্ছি না। সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার তো মেনে নিতে হবে। একটা ডিসিপ্লিন তো আছে। সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্ট হিসেবে সুপ্রিম কোর্টকে মেনে চলি। এতে যাঁর যত মন খারাপই হোক, বিশেষ কিছু করার নেই। যতদিন আমি জজ হিসেবে কাজ করব বা যখন বাইরেও থাকব তখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হব।'
আরও পড়ুন- ‘অভিজিৎবাবু ভগবান, তাঁকে ফেরত চাই’, পোস্টার হাতে বিক্ষোভ চাকরিপ্রার্থীদের
মামলা সরে যাওয়ায় তাঁরও কী মন খারাপ? এবিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'আমার মন খারাপ নয়। মামলাগুলি তো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য শুরু করিনি। মামলা আমার কাছে রইল না অন্য কারও কাছে গেল তা নিয়ে আমার বিশেষ কোনও মাথাব্যথা নেই।' এদিকে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলা সরে যাওয়ায় বেজায় মন খারাপ আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের। তাঁদের উদ্দেশ্যে বিচারপতির বার্তা, 'আপনারা অপেক্ষা করুন। মামলা তো শেষ হয়ে যায়নি। মামলা অন্য জজের কাছে গেছে। তিনিও তো হাইকোর্টেরই একজন জজ। তিনি দেখবেন।'
এরপরেই এক বিরাট আশঙ্কার কথা শোনান বিচারপতি নিজে। বর্তমানে তাঁর হাত থেকে কয়েকটি মামলা সরানো হলেও আগামী দিনে দুর্নীতির বাকি মামলাগুলিও সরানো হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর। এব্যাপারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'আরও দুর্নীতির মামলা আমার হাতে আছে। তবে আমার ধারণা সেগুলোও সরে যাবে। এই একই গ্রাউন্ডে ওই মামলাগুলিও সরে যাবে। আমি খুব আশ্চর্য হয়তো বা আমি একদমই আশ্চর্য নই। পদত্যাগ করছি না। আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক নই।'
মামলার দীর্ঘসূত্রিতা প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, 'এক একজনের স্টাইল অফ ফাংশনিং এক এক রকম। এরপর যিনি আসবেন তিনিও তাঁর স্টাইল অফ ফাংশনিংয়েই কাজ করবেন। তা করতে গিয়ে আমি যে কাজটা ৬ মাসে করছিলাম সেটা যদিও ৬০ বছর লেগে যায় তাহলেও আমার কিছু বলার নেই। সুপ্রিম কোর্টেরও কিছু করার নেই।' সব শেষে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'সুপ্রিম কোর্ট যুগ যুগ জিও।'