আমফান ত্রাণবিলি ঘিরে প্রশ্ন উঠেছিল। রাজনৈতিক মহল থেকে সুবিধাভোগীরা। প্রশ্ন তুলেছিল সকলেই। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে উঠে এল এমনই কিছু দিক, যেখানে প্রশ্নের তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
উলুবেড়িয়ার কালিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নথি ফের উস্কে দিল 'ত্রাণ বিলি দুর্নীতির' অভিযোগকে। ঘূর্ণিঝড় আমফান বিধ্বস্থ গ্রামের 'ক্ষতিগ্রস্থ'দের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ দেওয়ার কাজ শুরু প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। প্রাপকদের তালিকায় সুরজিৎ সাধুখাঁ (বাবা-কালিপদ দাস), দীপালি মন্ডল (কালিপদ দাস), উত্তম বেরা (কালিপদ দাস)। সকলেরই 'বাবা' এক। তদন্তে দেখা গেল কালিপদ দাস 'জীবিত' রয়েছেন কেবল নথিতেই। তাৎপর্যপূর্ণভাবে উপরিউক্ত ব্যক্তিরা কেউই একে অন্যেকে চেনেনও না, সম্পর্ক তো দূরঅস্ত। প্রত্যেকেরই পাকা বাড়ি এবং আমফান তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত নন এরা কেউই।
আমফান তালিকা তাই যেভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, অভিযোগ উঠছে সেখানেই। একই চিত্র দেখা গেল আমফান বিধ্বস্ত হাওড়ার উলুবেড়িয়া এলাকাতেও। সেখানকার পঞ্চায়েত এলাকায় 'একজন বাবার' নামেই ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছে ন'টি পরিবারকে। যাদের মধ্যে প্রতিবেশির সম্পর্ক বৈ আর কিছু নেই। তবে এই ঘটনাকে কেবলমাত্র 'ছাপার ভুল' হিসেবে মানতে পারছেন না কেউই। কীভাবে ত্রাণ তালিকায় জীবিত হয়ে উঠলেন 'মৃত' ব্যক্তিরা, তা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসীরাই।
সুপার সাইক্লোন আমফানে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং সুন্দরবন। বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে উঠে এল আরেক মোড় ঘোরানো চিত্র। দেখা গেল, ক্ষতিগ্রস্থ নন, কিন্তু ক্ষতিপূরণের তালিকায় এই যাদের নাম রয়েছে তাঁরা সকলেই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের 'কাছের লোক'। অথচ আমফান যাদের মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকু কেড়ে নিয়েছে, তাঁদের নাম রয়েছে ত্রাণের 'ওয়েটিং লিস্ট' তালিকায়।
কালিনগরেরই আরেক বাসিন্দার নাম পাওয়া গেল ত্রাণ প্রাপকের তালিকায়। শেখ নজরুল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয় শেখ নজরুলের। পুত্র জহিরুল জানালেন, "আমার বাবা তিন বছর আগে মারা গিয়েছেন। আমি জানি না তালিকায় কীভাবে তাঁর নাম এসেছে। আমরা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনও করিনি।" নজরুলের ডেথ সার্টিফিকেট বের করতে করতে এমনটাই জানালেন জহিরুল।
জহিরুলের মা আজমাইরা বিবি জানান ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার পর শেখ নজরুলের ব্যাঙ্কের পাসবুক তিনি সেখানেই জমা করে দিয়ে আসেন। একরাশ শঙ্কা নিয়ে আজমাইরা বিবি বলেন, "ওঁর নাম ক্ষতি ক্ষতিপূরণের তালিকায় আসার পর পঞ্চায়েতের এক সদস্য আমাকে ব্যাঙ্কে নিয়ে যান। আমাকে আবার সেই পাসবুকটি ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমি এখনও কোনও টাকা হাতে পায়নি।"
সম্প্রতি ত্রাণ দুর্নীতি নিতে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকজ করেছেন তৃণমূলের একাধিক নেতাদের। রাজ্যের বনমন্ত্রী এবং হাওড়া জেলার তৃণমূল নেতা বলেন, "এই ধরণের দুর্নীতি কখনই মেনে নেওয়া যাবে না। দল কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং দুর্নীতি নির্মূল করবে।"
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন