নেশায় আসক্ত ছেলেকে সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে বাবা-মাই পাঠিয়েছিলেন নেশা মুক্তি কেন্দ্রে। তবে সুস্থতার বদলে সেখানে চরম পরিণতি হল ছেলের। নেশা ছাড়াতে উপযুক্ত চিকিৎসার বদলে নেশামুক্তি কেন্দ্রের লোকজন তাঁদের ছেলেকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। মারের চোটে ছেলেটির দু'পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ভেঙে গিয়েছে বলেও দাবি পরিবারের। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ছেলেটির পরিবার। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন হলে দাবি করেছেন নেশামুক্তি কেন্দ্রের এক কর্মী।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা ইব্রাহিম শেখ। প্রায় সময় নেশাগ্রস্ত থাকতেন ওই যুবক। ইব্রাহিমকে সুস্থ করতে এলাকারই একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁর বাড়ির লোকজন। অভিযোগ, সেখানে চিকিৎসার বদলে ওই যুবককে ব্যাপক মারধর করে পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ছেলের উপর অমানবিক অত্যাচার হয়েছে বলে দাবি বাবা-মায়ের। অকথ্য এই নির্যাতনের বিহিত চেয়ে তাঁর বাবা মনিরুল শেখ মেমারি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশে অভিযোগ জানাতেই বেপাত্তা নেশা মুক্তি কেন্দ্রের কর্মকর্তারা ।
ইব্রাহিম শেখের বাড়ি মেমারির খাঁড়ো এলাকায়। তাঁর বাবা মনিরুল শেখ জানিয়েছেন, তাঁর ২৪ বছর বয়সী ছেলে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। নেশা ছাড়াতে গত ২৪ এপ্রিল তাঁর ছেলে ইব্রাহিমকে মেমারির সুভাষ নগরের নেশা মুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁরা। নেশা মুক্তি কেন্দ্রের উপযুক্ত নজরদারিতে থেকে তাঁদের ছেলে ফের সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারবেন বলে তাঁরা আশা করেছিলেন। তবে তাঁদের অভিযোগ, সুস্থ হওয়া তো দূর অস্ত, বেধড়ক মারধরে তাঁদের ছেলে এখন হাঁটা-চলার শক্তি হারিয়েছে।
আরও পড়ুন- মেয়ে নিয়ে তিহাড়ে কেমন আছেন কেষ্ট! দেখতে যাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদরা
পুলিশকে মনিরুল শেখ জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেকে দেখতে গত বুধবার তাঁরা ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। ইব্রাহিম বাবাকে দেখেই কাঁদতে শুরু করেন। তিনি জানান নেশা মুক্তি কেন্দ্রে তাঁকে ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এমনকী গরম লোহার খুন্তি দিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ইব্রাহিমের। পাইপ দিয়ে মেরে তাঁর পা জখম করা হয়েছে বলে দাবি যুবকের।
ছেলের এই অভিযোগ শুনে ওই দিনই নেশা মুক্তি কেন্দ্র থেকে তাঁকে বের করে সোজা মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর বাবা। মনিরুল শেখ বলেন, 'মেমারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবু ইব্রাহিমকে দেখার পর তাঁর পায়ের এক্স রে করার কথা বলেন। পায়ের এক্স রে করানো হলে তা দেখে ডাক্তারবাবু জানিয়ে দেন প্রচণ্ড আঘাতের জেরে ইব্রাহিমের দুটি পায়ের গোড়ালির হাড় ফেটে গেছে। ইব্রাহিমকে বর্ধমান হাসপাতালে রেফার করে দেন ওই চিকিৎসক।' আপাতত মনিরুলের দু'পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। বাড়িতেই তাঁকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন- শুকনো হাওয়া গিলে খাচ্ছে বাংলাকে, সহ্যের সীমা ছাড়াচ্ছে গরম! স্বস্তির বৃষ্টি কবে?
এদিকে, ছেলের চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরে বৃহস্পতিবার রাতে মেমারি থানায় গিয়ে মনিরুল শেখ ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। কেন্দ্রের দুই কর্মকর্তা অভিজিৎ চৌধুরী ও বুম্বা সাহার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। নেশা মুক্তি কেন্দ্রের কর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ইব্রাহিমের পরিবারের।
এদিকে, পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর থেকে মেমারির ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্রে কর্তারা পলাতক। তবে ওই কেন্দ্রের এক কর্মী দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, ''বিষয়টি নিয়ে ভুল প্রচার হচ্ছে। ওই যুবক তিনতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল। পা ভেঙে গিয়েছে। নেশার কারণেই এটা করেছে। ওই যুবক আরও দু'জনকে নিয়ে বেরিয়েছিল। তিনতলার জানলা ভেঙে ফেলেছিল তিন-চারজন মিলে। তিনজনই ঝাঁপ দিয়েছিল।
আরও পড়ুন- চলন্ত ট্রেনে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন প্রসূতি, পাশে দাঁড়াল রেল, বাকিটা ইতিহাস!
মেমারির ছেলেটার পা ভেঙে গেছে। ওরা সবই নেশাগ্রস্ত। এই কারণেই ওদের আটকে রাখা হয়েছিল। ওদের পরিবার ওদের বাড়িতে সামলাতে পারেনি বলেই এখানে দিয়ে গিয়েছিল। পরে সেন্টারে এসে ভাঙচুর করেছে।' এদিকে, এই ঘটনা প্রসঙ্গে মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, 'অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। পুলিশকে বলব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।' এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, 'অভিযোগ দায়ের হয়ে থাকলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।'