Advertisment

লুঠের অভিযোগ, মৃতদের নাম ভাঁড়িয়ে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, কাঠগড়ায় তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত

অভিযোগ উঠতেই মুখ লুকিয়েছেন নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুমুর ঘোষ ও উপ-প্রধান লিয়াকত শেখ। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কেউই মুখ খুলতে চাননি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
allegations of corruption in approval of Nandai Panchayat bangla awas yojana

নিশানায় এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

কেউ প্রয়াত প্রায় আট বছর হল, আবার কেউ বছর পাঁচেক আগে। কিন্তু তাতে কি যায় আসে? মৃত ব্যক্তিদের নামেই চলেছে সরকারি অর্থের লুঠ। মৃত ব্যক্তিদের নাম ভাঁড়িয়েই দেদারভাবে অনুমোদন করানো হয়েছে বাংলা আবাস যোজনার ঘরের টাকা। এরপর সব জানাজানি হতেই বিডিও-র দ্বারস্থ হলেন মৃতদের পরিজনরা। কাঠগড়ায় তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পূর্ব বর্ধমানের কালনার নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েত।

Advertisment

বাংলা আবাস যোজনার অনুমোদন নিয়ে কালনার নান্দাই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে এই প্রথম দুর্নীতির অভিযোগ উঠলো এমটা নয়। চার দিন আগেই বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুক বাংলা আবাস যোজনার ঘরের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিডিওকে সব জানিয়েছিলেন। নান্দাই পঞ্চায়েতের দুপসা গ্রাম নিবাসী প্রতিবন্ধী মহসীন মণ্ডল ওই দিন প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন যে, কাগজে কলমে তিনি বাংলা আবাস যোজনায় ঘর পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ঘরের টাকা তাঁর কাছে পৌঁছায়নি। তাঁর আইডি নম্বর ব্যবহার করে ঘরের টাকা তুলে অন্য ব্যক্তি হাতিয়ে নিয়েছেন। এই দুর্নীতিতে নান্দাই পঞ্চায়েতের প্রধান ও গ্রাম সদস্য সরাসরি যুক্ত বলে প্রশাসনের কাছে সরব হয়েছেন মহসীন মণ্ডল।

ওই দিনই নান্দাই পঞ্চায়েতের আশ্রম পাড়া নিবাসী বুলু দেবনাথও একইরকম অভিযোগ তুলে বিডিওর দ্বারস্থ হন। তিনিও বাংলা আবাস যোজনায় এই আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ প্রধান ও ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজারকে কাঠগড়ায় তোলেন।

এই ঘটনার পর চার দিন কাটতে না কাটতে ফের বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে নান্দাই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে চঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন একাধিক গ্রামবাসী। স্থানীয় দুপসা গ্রাম নিবাসী ভ্যাবল মোল্লা বিডিওকে জানিয়েছেন, তাঁর মা নুরনাহার বিবি ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই প্রয়াত হয়েছেন। তার পরও কাগজে কলমে তাঁরা মায়ের নামে বাংলা আবাস যোজনার ঘর অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু ঘরের টাকা তাঁরা কেউ পাননি। সম্প্রতি তিনি জানতে পেরেছেন যে, তাঁর মায়ের নামে অনুমোদিত হওয়া ঘরের টাকা অন্য জন হাতিয়ে নিয়েছেন।

ভ্যাবল মোল্লা ছাড়াও স্থানীয় কুতিরডাঙা নিবাসী শিখা মধু এদিন বিডিওকে অভিযোগ আকারে জানিয়েছেন যে, তাঁর বাবা মহাদেব মধুর ২০১৭ সালে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, তাঁর প্রয়াত বাবার নামে বাংলা আবাস যোজনার ঘর অনুমোদন হয়েছে, এবং ঘরের টাকা তাঁরা পাননি। জালিয়াতি করে অন্যজন তাঁর বাবার নামে অনুমোদিত হওয়া ঘরের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

কুতিরডাঙা নিবাসী সুশীলা বিশ্বাসও একই ধরণের অভিযোগ করেছেন। এমনকি প্রকৃত গৃহহীনকে বঞ্চিত রেখে দোতলা বাড়িতে বসবাস করা অঞ্চলের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি নিজের স্ত্রীর নামে বাংলা আবাস যোজনার ঘরের টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ উঠতেই মুখ লুকিয়েছেন নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুমুর ঘোষ ও উপ-প্রধান লিয়াকত শেখ। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কেউই মুখ খুলতে চাননি। বিডিও (কালনা- ১) সেবন্তী বিশ্বাস বলেছেন, 'অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে তদন্তে খুব দ্রুত সত্য প্রকাশ পাবে। তদন্তে অনিয়ম কিছু ধরা পড়লে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

East Burdwan burdwan Kalna
Advertisment