Advertisment

প্রধান শিক্ষকের 'কু-কীর্তি'তে কান পাতা দায়! গোটা স্কুলই লাটে ওঠার জোগাড়!

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
allegations of financial corruption against the headmaster

স্কুলে বিক্ষোভ অভিভাবকদের।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জেরবার রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর। দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় বহু শিক্ষকের যেমন চাকরি গিয়েছে তেমনই শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক শীর্ষ কর্তার। ঠিক এই আবহেই পূর্ব বর্ধমান জেলার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেনজির আর্থিক দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।

Advertisment

রায়না ২ নং ব্লকে চকচন্দন দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষকের নাম প্রশান্ত দাস। বৃহস্পতিবার জেলার স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিনিরা দুর্নীতির তদন্তে স্কুলে গেলে গ্রামবাসী ও অভিভাবকরা তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। যা নিয়ে স্কুলে হুলস্থুল পড়ে যায়। স্কুল ইন্সপেক্টর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার কথা জানালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

চকচন্দন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ছেলে মেয়েদের শিক্ষা আলোকে আনার লক্ষে ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা পায় চকচন্দন দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি স্বাভাবিক নিয়মেই চলছিল । কিন্তু ২০১৯ সালে প্রশান্ত দাস এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়টি সুনাম খোয়াতে শুরুকরে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ৩৭০ জন পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন ১৭ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও দু’জন অশিক্ষক কর্মচারী। সবাই স্কুলে আসেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে শুধু দেখা পাওয়া যায় না
প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত দাসের। সেই কারণে স্কুলের পঠন পাঠন থেকে শুরু করে পরিকাঠামো গত উন্নয়ন সহ সব দিক থেকেই স্কুলটি পিছিয়ে পড়েছে।

পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল পাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছেএমনকি স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসী, সহ শিক্ষক ও অভিভাবকদের। বিদ্যালয়ের শরীরশিক্ষা বিভাগের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দাবি করেন, “গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের আনা অভিযোগ সত্য।' এর জন্য তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককেই কাঠগড়ায় তোলেন। মৃত্যুঞ্জয়বাবু আরও বলেন, “স্কুল পরিদর্শক (এস আই) স্যারের সই জাল করে প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত দাস স্কুলের একাধীক ’ফাণ্ড’ থেকে টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। মিড-ডে মিলের খাতের টাকা হাতিয়ে নিতেও কুন্ঠা বোধ করেননি প্রধান শিক্ষক। এইসব দুর্নীতি ধরা পড়ার পর মুচলেখা দিয়ে প্রধান শিক্ষক জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। কিছু টাকা ফেরৎ দিলেও বহুদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মোটা অঙ্কের টাকা আজও প্রধান শিক্ষক ফেরত দেননি। সব বিষয়টি জেলা স্কুল পরিদর্শকের জানানো হলেও আশ্চর্য জনক ভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Advertisment

আরও পড়ুন- যাদবপুর-কাণ্ডে এবার ভীষণ কড়া রাজ্য, র‍্যাগিং বন্ধের লক্ষ্যে বেনজির উদ্যোগ!

প্রধান শিক্ষকই চকচন্দন দুর্গাদাস স্কুলের একমাত্র গণিতের শিক্ষক। তাঁর অনুপস্থিতিতে এখনও পর্যন্ত নবম ও দশম শ্রেণীর পড়ুয়াদের অঙ্কের পরীক্ষাও নেওয়া যায়নি। এছাড়াও দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক স্কুলে না আসায় স্কুলের প্রশাসনিক কাজ শিকেয় ওঠার পাশাপাশি এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন হয় নি বলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানিয়েছেন।

গ্রামবাসী মৃদুল মণ্ডল, রবিউল হক এবং এক পড়ুয়ার অভিবাবক ইলিয়াস মণ্ডলদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক চরম দুর্নীতিগ্রস্ত। দুর্নীতি ধরা পড়ে যাওয়ার পর থেকে ফোন সুইচ অফ করে দিয়ে তিনি স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। স্কুলে কোনও পরিচালন সমিতি নেই। স্কুলে পড়াশুনা সহ সব কিছু লাটে উঠলেও দেখার কেউ নেই। সর্বশিক্ষা মিশন ও মিড- ডে মিল তহবিলের যে টাকা প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত দাস আত্মসাৎ করেছেন, তা ফেরত না দিয়েই তিনি বেপাত্তা হয়ে রয়েছেন। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিদালয়টি কার্যত অভিভাবকহীন। জেলা স্কুল দফতর এতদিন সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সবাই হতাশ।

এস আই (রায়না ৪ চক্র) সুশান্ত ঘোষ এদিন প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত দাসের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফ আই আর করা হবে”। আর ডি আই (স্কুল) শ্রীধর প্রামাণিক বলেন,“তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই বিস্তারত জানাতে পারবো“।

Corruption West Bengal school Purba Bardhaman
Advertisment