Advertisment

বর্ধমানে পুরসভায় বিরাট 'কেলেঙ্কারি'! অডিটে ২৩ কোটির দুর্নীতির অভিযোগ

রাজ্যের বাকি পৌরসভা গুলির নির্বাচনের ঠিক আগেই বর্ধমান পুরসভা বড় কেলেঙ্কারি ফাঁস।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Allegations of financial scam of 23 crore against Burdwan Municipality in the audit report

পুরসভার অডিট ঘিরে বর্ধমানে বিশাল শোরগোল।

রাজ্যের বাকি পৌরসভা গুলির নির্বাচনের ঠিক আগেই বর্ধমান পুরসভার শপিং কমপ্লেক্স ও আবাসন তৈরি সংক্রান্ত অডিট রিপোর্টে ফাঁস প্রায় ২৩ কোটি টাকার কেলঙ্কারি। এছাড়াও অন্য আরও একটি অডিও রিপোর্টে ফাঁস হয়েছে। সেখান থেকে জানতে পারা গিয়েছে যে, ৪১.৩৯ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বর্ধমান পৌরসভা ২০১৮ সাল থেকে বেআইনিভাবে ১০টি বহুতল নির্মানের ছাড়পত্র দিয়েছে। এই সব কেলেঙ্কারি
প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলে। ঘটনা জানার পর তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা।

Advertisment

রাজ্যের প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল (ওয়েস্ট বেঙ্গল লোকাল অডিট ডিপার্টমেন্ট) সম্প্রতি বর্ধমান পৌরসভা নিয়ে করা তাঁদের দু'টি অডিট রিপোর্ট পেশ করেছে। রিপোর্টের কপি বর্ধমান পৌরসভাতেও জমা পড়েছে। যদিও কারা পৌরসভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালীন এই আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছিল তা অডিট রিপোর্টে স্পষ্ট হয়নি ।

একটি অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে-
শহরের ’গোদা’ মৌজার ৩.৪২ একর অর্থাৎ ৩৪২ শতক জমি বর্ধমান পৌরভার। ২০০৬ সালে পৌরসভা পিপিপি মডেলে (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার শিপ)ওই জমিতে শপিং কমপ্লেক্স ও রেসিডেনসিয়াল কমপ্লেক্স (আবাসন) তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে টেন্ডার করে। সেই টেন্ডারে অংশ নিয়ে কাজের বরাত পায় আর ডি বি রিয়েলিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটিড নামে একটি সংস্থা। প্রকল্পের কাজ নিয়ে ২০০৭ সালে এই সংস্থার সঙ্গে বর্ধমান পৌরসভার মৌ স্বাক্ষরিত হয়। মৌ অনুযায়ী ঠিক হয় বর্ধমান পৌরসভাকে ১৬ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা দিতে হবে ওই সংস্থাকে। সেই মত প্রথমেই ওই সংস্থা চেকের মাধ্যমে ২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা বর্ধমান পৌরসভায় জমা দেয়। বাকি ১৪ কোটি টাকা ৬টি কিস্তিতে ওই সংস্থা বর্ধমান পৌরসভাকে মিটিয়ে দেবে।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৌ চুক্তি অনুযায়ী ঠিক হয় গোদা মৌজার ওই জমিতে বেসমেন্ট সহ ৬ তলার একটি শপিং কমপ্লেক্স ও বেসমেন্ট সহ ৮ তলার ৪ টি রেসিডেনশিয়াল কমপ্লেক্স তৈরি হবে। সেই মত পৌরসভা থেকে প্ল্যানও স্যাংশন হয়। প্ল্যান অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। তারই মধ্যে পৌরসভার পাওনা ১৪ কোটি টাকা মিটিয়ে দেয় আর ডি বি রিয়েলিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। তারপরেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই সংস্থাটি বিল্ডিংয়ের হাইট এক্সটেনশনের জন্য বর্ধমান পৌরসভায় আবেদন করে। অভিযোগ মৌ চুক্তির শর্ত দূরে সরিয়ে রেখে বকলমে সংস্থাটিকে অনুচিত সেই সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়। যার দৌলতেই সংস্থাটি বেসমেন্ট সহ ৮তলা রেসিডেনসিয়াল কমপ্লেক্স তৈরির পরবর্তে, করে নেয় বেসমেন্ট সহ ১২ তলার ৪টি রেসিডেনসিয়াল কমপ্লেক্স।

অর্থাৎ ভিতরে ভিতরে আঁতাঁত করে ওই সংস্থাটি অতিরিক্ত ১ লক্ষ ১ হাজার ৭৯০ বর্গফুটের বাড়ি তৈরি করে নেয়। বিল্ডিংয়ের এই হাইট এক্সটেনশন সংক্রান্ত কোন নথি বা বোর্ড অফ কাউন্সিলার্সদের করা কোন রেজিলিউসন কপিও অডিটাররা পৌরসভায় থেকে পাননি। অডিট রিপোর্টে এও উল্লেখ করা হয়েছে বিল্ডিংয়ের হাইট এক্সটেশন করে নিয়ে সংস্থাটি বর্তমান বাজার মূল্য মোতাবেক ২২ কোটি ৯০ লক্ষ ২৮ হাজার ২৮৭ টাকা মুনাফা করেছে। কিন্তু হাইট এক্সটেনসশনের দরুন বর্ধমান পৌরসভায় কোন প্রিমিয়াম অর্থ জমা না পড়ায় পৌরসভা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।যদিও ওই নির্মানকারী সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার পুগুলিয়া এদিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন , 'বিল্ডিং নির্মান সংক্রান্ত সব কাগজপত্র স্বচ্ছ ভাবে রয়েছে। নতুন করে নকশার জন্যে পৌরসভা কে সংস্থা বেশী টাকা দিয়েছে। তবুও কেন অডিট রিপোর্টে তা ফঠে এল না তা বলতে পারবো না।'

ওই অডিট রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শপিং কমপ্লেক্স ও রেশিডেনশিয়াল কমপ্লেক্স ছাড়াও পৌরসভা ৫৯৯ মেমোতে অপর আরও একটি হাইরাইজ বিল্ডিং স্যাংশন করেছিল। তার কোন নথির হদিশ পৌরসভা থেকে পাননি অডিটাররা। অর্থপ্রাপ্তি থেকে পৌরসভাকে বঞ্চিত করে কারা, কি উদ্দেশ্যে একটি বেসরকারী সংস্থাকে এই আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দিল সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

অপর অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে বর্ধমান পৌরসভা বেআইনি ভাবে ১০টি বহুতল (হাইরাইজ বিল্ডিং) নির্মানের ছাড়পত্র দিয়ে ৪১.৩৯ লক্ষ টাকা আদায় করেছে। যদিও ওইসব বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পাসে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারের কোন রিপোর্ট নেই। সুপারেনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার লেভেল থেকেও ওইসব বিল্ডিংয়ের প্ল্যান খতিয়ে দেখা করা হয়নি। বহুতল তৈরি হলেও পৌরসভার নথিতে তার স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়নি। এমনকী এই ক্ষেত্রে ’ওয়েস্টবেঙ্গল বিল্ডিং রুল ২০০৭ কে’ মান্যতাও দেওয়া হয়নি বলে অডিটাররা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন।

publive-image
এই প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ।

এই বিষয়ে বর্ধমান পৌরসভার উপ-প্রশাসক আইনুল হক বলেন , 'অডিট রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। রিপোর্টের আইনগত বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'

জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্তা জানিয়েছেন , সঠিক ভাবে অডিট রিপোর্ট তৈরি হলে এই বাংলার সমস্ত পৌরসভার এমন আর্থিক কেলেঙ্কারি সামনে আসবে। সুনীলবাবু দাবি করেন , 'বর্ধমান পৌরসভার দায়িত্বে থাকা শাসক দলের কর্তা ব্যক্তিরা এই সব কেলেঙ্কারিতে যুক্ত। বেআইনি জেনেও ওনারা কাটমানি খেয়ে বেআইনি ভাবে এইসব বহুতল বিল্ডিং নির্মানে ছাড়পত্র পাইয়ে দিয়েছেন। বেআইনিভাবে নির্মিত ওই সব বহুতল যে কোন সময় ভেঙে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না । শুধু অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করলেই হবে না । যাদের অঙ্গুলি হেলনে বর্ধমান পৌরসভা এলাকায় একাধিক বেআইনি বহুতল বিল্টিং নির্মান হয়েছে তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকে করতে হবে।' বর্ধমান পৌরসভা নির্বাচনে এই ইস্যুকেই সামনে রেখে বিজেপি আন্দোলনে নামবে বলে বিজেপি নেতা সুনীল গুপ্তা জানিয়েছেন।

রাজ্যের বাকি পৌরসভা গুলির নির্বাচনের ঠিক আগেই বর্ধমান পুরসভার শপিং কমপ্লেক্স ও আবাসন তৈরি সংক্রান্ত অডিট রিপোর্টে ফাঁস প্রায় ২৩ কোটি টাকার কেলঙ্কারি। এছাড়াও অন্য আরও একটি অডিও রিপোর্টে ফাঁস হয়েছে। সেখান থেকে জানতে পারা গিয়েছে যে, ৪১.৩৯ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বর্ধমান পৌরসভা ২০১৮ সাল থেকে বেআইনিভাবে ১০টি বহুতল নির্মানের ছাড়পত্র দিয়েছে। এই সব কেলেঙ্কারি
প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলে। ঘটনা জানার পর তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা।

রাজ্যের প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল (ওয়েস্ট বেঙ্গল লোকাল অডিট ডিপার্টমেন্ট) সম্প্রতি বর্ধমান পৌরসভা নিয়ে করা তাঁদের দু'টি অডিট রিপোর্ট পেশ করেছে। রিপোর্টের কপি বর্ধমান পৌরসভাতেও জমা পড়েছে। যদিও কারা পৌরসভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালীন এই আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছিল তা অডিট রিপোর্টে স্পষ্ট হয়নি।

 ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

West Bengal burdwan West Burdwan
Advertisment