New Update
বিশ্বের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত আমাজনের জঙ্গলে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ গাছ। অকাল মৃত্যু ঘটেছে অসংখ্য বণ্যপ্রাণীর। সারা বিশ্বে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিতভাবে গাছ লাগানোর ওপরেই জোর দিচ্ছে সারা বিশ্ব। এমতাবস্থায় আমাজনের ঘটনার জেরে দুর্গাপুজাের থিমই বদলে ফেলল হাওড়ার একটি পুজো কমিটি। ২ হাজারেরও বেশী গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সচেতনতার বার্তাই জনমানসে তুলে ধরতে চলেছে হাওড়ার অন্যতম প্রাচীন বারোয়ারি দুর্গাপুজােটি।
আমাজন অরণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর জীব জগতের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের প্রায় ২০ শতাংশই আসে আমাজনের বনভূমিতে থাকা গাছ থেকে। ৭০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরন্যটি প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। পৃথিবী জুড়ে যে রেইনফরেস্ট, তার অর্ধেকটা এই অরণ্য নিজেই। এই বনে প্রায় ৩৯০ লক্ষ কোটি বৃক্ষ রয়েছে, যেগুলো প্রায় ১৬০০০ প্রজাতিতে বিভক্ত। সমগ্র বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই বিশাল বনাঞ্চল। সেই বনাঞ্চলের কিছুটা অংশ আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে আগামীদিনে পৃথিবীতে কমতে পারে অক্সিজেনের সরবারহ, এমনটাই আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।
এক বছর লছমনঝোলা, তো অন্য বছর অমরনাথের গুহা, এই ভাবেই প্রত্যেক বছর নিজেদের পুজো মণ্ডপ সাজিয়ে তুলতেন হাওড়ার কামিনী স্কুল লেনের সালকিয়া বারোয়ারি দুর্গোৎসব কমিটি। এবার ১৪৭তম বর্ষেও সেভাবেই মণ্ডপ সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল বলে ক্লাবের তরফে জানানো হয়। কিন্তু, হঠাৎ মত বদলায়। ক্লাবের সম্পাদক সমিত ঘোষ বলেন, “আমাজনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখেই নতুন ভাবনা শুরু হয়। আমরা এই থিমের মাধ্যমে হাওড়ায় সচেতনতা গড়ে তুলতে চাই। দুর্গাপুজোর সময়ে সহজে এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছান সম্ভব”।
মন্ডপের শুরুতেই থাকছে জ্বলন্ত আমাজন বনাঞ্চলের মডেল, এরপরেই থাকছে পোড়া গাছ। গাছ কাটার দৃশ্য তুলে ধরেও দর্শনার্থীদের কাছে বার্তা দিতে চলেছে এই প্রয়াস। এরপরেই নতুন সৃষ্টির নজির হিসেবে থাকছে ২ হাজার গাছ। এই গাছের মধ্যে ৮০০টি বড় গাছ ও ১২০০টি গুল্ম জাতীয় গাছ।
সুমিতবাবু জানান, এবারের পুজার বাজেট ২ লক্ষ টাকা। পুজো শেষে এই ২হাজার গাছের ভবিষ্যৎ কী হবে, তাও ইতিমধ্যেই ঠিক করা হয়েছে। স্থানীয় ২০টিরও বেশি ক্লাব ও সংগঠন নিজস্ব জায়গায় বসাবেন প্রায় ৫ শতাধিক গাছ। এছাড়াও বেশ কিছু পার্ক ও অন্যান্য স্থানেও বসানো হবে এই গাছগুলি। বাকি গাছগুলো দেওয়া হবে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের। শুধুমাত্র গাছই নয়, প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া বোতলগুলোকে টবের পরিবর্তে ব্যবহারের অভিনব পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে এই পুজো প্যান্ডেলে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কাছে বৃক্ষ নিধনের অপকারিতাও তুলে ধরছে এই ক্লাব।