Dalit Movement: আম্বেদকরের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দলিত সচেতনতার নতুন বার্তা দেখল কলকাতা। (ছবি- নিজস্ব)
Breaking the Silence: How Kolkata Is Becoming the Ground Zero for a Revived Dalit Assertion: ভদ্রলোকের ভাষার আড়ালে প্রান্তিক দলিতদের আন্দোলন চেপে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই ভাষার ধারক-পরিচালক উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ। যাঁরা দলিতদের ভাষা ঠিক করে দিচ্ছেন। তাঁদের আন্দোলনকে শিক্ষা-সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখে বিভ্রান্ত করছেন। তাই আজও দেশের অন্যান্য রাজ্যের মত বাংলাতেও প্রথমসারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তারা বেশিরভাগই উচ্চবর্ণের। আর, এভাবেই তাঁরা দলিতদের প্রতারিত করছেন। ১৩৬তম আম্বেদকর জয়ন্তীর ঠিক আগের দিন, রবিবার এভাবেই দলিত আন্দোলনকারীদের চোখা চোখা অভিযোগে বিদ্ধ হল কলকাতা-সহ বাংলার ভদ্রসমাজ আর তাঁদের ভাষা।
Advertisment
রবিবার শহর কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরির রায় দেবনাথ হলে আম্বেদকর জয়ন্তী উপলক্ষে দলিত আন্দোলনের সচেতনতা বাড়াতে, তার রূপরেখার পটভূমি সম্পর্কে আন্দাজ পেতে বসেছিল আলোচনাচক্র। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলিত আন্দোলনকারীদের অগ্রণী মুখ কল্যাণী ঠাকুর চাঁড়াল। উপস্থিত ছিলেন আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তমোঘ্ন হালদারের মত দলিত আন্দোলনকারীরা। এই আলোচনাচক্রের উদ্যোক্তা ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অগ্রণী সংগঠন মার্শ এগেনস্ট ডিসক্রিমিনেশন (Marsha AGAINST DISCRIMINATION)।
অধ্যাপক তমোঘ্ন হালদার বলেন, 'মনে রাখতে হবে যে মরিচঝাঁপি শুধুমাত্র গণহত্যা নয়। এটা জাতপাতভিত্তিক গণহত্যা। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর প্রশাসনের শীর্ষস্থান দখল করে ভদ্রলোকরা এরাজ্যে দলিতদের অগ্রগতি ঘটতে দিচ্ছে না। যাদবপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছবিটা দেখলেই একথা স্পষ্ট হবে।' তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে, তা স্ক্রিনে দেখিয়ে তাঁর অভিযোগগুলো স্পষ্ট করে দেন। কল্যাণী ঠাকুর চাঁড়াল বলেন, 'আর্যদের শ্রেষ্ঠত্বের তত্ত্ব ইউরোপীয় পণ্ডিতদের সাহায্যে ভারতের এবং রাজ্যের ব্রাহ্মণ্যবাদীরা টিকিয়ে রেখেছে। অকুপেশনাল মোবিলিটি ছাড়া দলিতদের অগ্রগতি হওয়া অসম্ভব।'
নাগরিক অধিকার আন্দোলন কর্মী, রূপান্তরকামী অনুরাগ মৈত্রেয়ী বলেন, 'দলিত মানুষরা যেভাবে অবদমিত হন, রাষ্ট্র বা শাসকরা যেভাবে ঠিক করে দেন যে কোন মানুষ কোন আন্দোলন করবেন, তার বিরুদ্ধে আমরা এলজিবিটি-সহ সমস্ত প্রান্তিক মানুষদের সংহত করছি। প্রান্তিক যৌনতার মানুষরাও যাতে অন্যান্য অবদমনকে চিহ্নিত করতে পারেন, তাঁদের লড়াইয়ে শামিল হতে পারেন, সেকথা মাথায় রেখে দলিত আন্দোলনের অগ্রদূত বাবাসাহেব বি আর আম্বেদকরের ১৩৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা এই জয় ভীম অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছি।'
Advertisment
বাংলায় ব্রাহ্মণ্যবাদের দাপাদাপি
হিন্দু ধর্মগ্রন্থে শূদ্রের উৎপত্তি থেকে রাজা লক্ষ্মণ সেনের সময় বাংলায় ব্রাহ্মণ্যবাদের নবজন্ম, তারই সূত্র ধরে ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিতে ভদ্রলোকের সৃষ্টি, যাবতীয় পটভূমি তুলে ধরে বক্তারা স্পষ্ট করে দেন- আজও কীভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদ বাংলার সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। মুখে দলিতদের কথা, ১০৮বার আম্বেদকরের নাম নিয়েও শিক্ষা আর সংস্কৃতিতে এই রাজ্যে ছড়ি ঘোরাচ্ছে উচ্চবর্ণই। তাদের ছত্রছায়ায় পরিপুষ্ট হচ্ছে উচ্চবর্ণের ছত্রছায়ায় থাকা অব্রাহ্মণরা। সমাজের নীচুতলার দলিতদের কার্যত এভাবেই বোকা বানানো হচ্ছে দিনের পর দিন।
বক্তাদের অভিযোগ, কখনও কমিউনিজম, কখনও বা অন্য তত্ত্ব আউড়ে এরাজ্যে দলিত আন্দোলনকে পঙ্গু করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে এখনও। রাজ্যের অগ্রণী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধার দোহাই দিয়ে নিজস্ব ভর্তির সংস্কৃতি তৈরি করে দূরে রাখা হচ্ছে দলিতদের। শিক্ষা, সংস্কৃতি থেকে প্রশাসন- কোনও কিছুতেই দলিতদের শীর্ষস্থান পৌঁছতে দেওয়া হচ্ছে না। তা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করে রাখছেন ভদ্রলোকরা বা উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিরা।
আন্দোলনকারীদের স্পষ্ট কথা, এই লড়াই ভাতের লড়াই। এই লড়াই জাতেরও লড়াই। তাই তাঁরা শ্রেণিবৈষম্যের এই নাগপাশ ছিন্ন করতে বদ্ধপরিকর। আগামী দিনে আম্বেদকরের আদর্শকে সামনে রেখে দলিত আন্দোলনকারীদের এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন এলজিবিটি কমিউনিটির আন্দোলনকারীরাও। অনুষ্ঠানে পায়েল কাপাডিয়ার নির্দেশনায় নির্মিত একটি সংশ্লিষ্ট ছবিও প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি, নতুন লড়াইয়ের শপথগ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত হয় আলোচনাচক্রও। যা আম্বেদকর জয়ন্তীর আগে দলিত আন্দোলনের নবজোয়ারের ডাক এই শহরের বুকেই নতুন করে তুলে ধরল।