Kaun Banega Crorepati : কৌন বনেগা ক্রোড়পতি। টিভির একটি জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো। ২০০০ সালে অমিতাভ বচ্চনের উপস্থাপনায় যে গেম শো চালু হয়েছিল তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। আর এই জনপ্রিয় গেমে অংশ নেওয়ার জন্য সাড়ে সাত বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন গ্রাম বাংলার প্রান্তিক ঘর থেকে উঠে আসা এক উচ্চশিক্ষিত যুবক।
না, শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, অমিতাভকে চাক্ষুস দেখার জন্যও নয়। কেবিসি তে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের গ্রামের এক সামাজিক সমস্যা বচ্চন স্যারের কানে তোলার জন্য। তার মনে হয়েছিল একমাত্র এই মানুষটি তাদের সমস্যার কথা বুঝতে পারবেন। অবশেষে তিনি সফল হলেন।
কেবিসি-র হটসিটে বসে বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের কাছে নিজের পরিবারের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছিলেন হুগলির গোঘাট ব্লকের অন্তর্গত আগাই গ্রামের যুবক জয়ন্ত দুলে। জয়ন্ত দের আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল। মাটির বাড়ি। বাবা একটি মুদির দোকানে কাজ করে তাকে এবং তার বোনকে পড়াশোনা করিয়েছেন। মা সাধারণ গৃহবধূ। জয়ন্ত যাদবপুর থেকে এডুকেশনে মাস্টার ডিগ্রী করেছেন। বর্তমানে অনলাইনে পড়ান।
জয়ন্ত জানান, টিভি দেখার সময় 'কোন্ বনেগা ক্রোড়পতি' দেখতে দেখতে নিজেই উত্তর দিতেন। তখনই বাবা ভাদু দুলে তাঁকে উৎসাহিত করতেন, খোকা তুইও পারবি। বাবার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে তারপর থেকেই নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করতে থাকেন জয়ন্ত। স্বপ্ন দেখতে থাকেন অমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি হবার।
আরও পড়ুন - < Babu Pal Death: আলোর শহরে নামল গভীর আঁধার, প্রয়াত বিখ্যাত আলোকশিল্পী বাবু পাল >
২০১৬ সাল থেকে সেই প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। আর বাকিটা অনেকটা রূপকথার মতো। এ বছর মার্চ মাস থেকে তাঁর সেই স্বপ্ন একটু একটু করে বাস্তবে রূপ নিতে থাকে। প্রথমে দিল্লিতে গ্রাউন্ড অডিশনে পাশ করে মূল পর্বে পৌঁছে যান। তারপর একেবারে অমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি হয়ে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার জিতে নেন। সেই সঙ্গে গোল্ড কয়েন সহ অসংখ্য গিফট কুপন।
জয়ন্ত বলেন, তখনই অমিতাভ বচ্চনকে জানিয়েছিলাম, আমাদের গ্রামের কথা, আমাদের পরিবারের দুর্দশার কথা। সরকার থেকে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হলেও স্নানাগারের অভাবে পুকুরের জলে মা এবং বোনকে স্নান করতে হয়। যেটা আমার কাছে খুবই লজ্জার মনে হয়। তাছাড়া ওই পুকুরেই গরু সহ অন্যান্য গবাদি পশুদেরও স্নান করানো হয়। স্বাভাবিকভাবেই রোগ জ্বালা লেগেই থাকে।
আরও পড়ুন - < RG Kar Incident: ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগানে জনগর্জন! আগামীকাল স্বাস্থ্য ভবন অভিযান বিজেপির >
জয়ন্ত জানান, এ কথা শুনেই অমিতাভ বচ্চন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তখনই তিনি বলেন, 'তুমি কোন পুরস্কার জেতো বা না জেতো, তোমার বাড়িতে একটি স্নানাগার আমি তৈরি করে দেব। তার সম্পূর্ণ খরচ আমার'। তারপর একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জয়ন্ত সাড়ে ১২ লাখ টাকার পুরস্কার জিতে নেন। কিন্তু অমিতাভ বচ্চন তাঁকে জানিয়েছেন, তিন মাসের তিনি তাঁর বাড়িতে এটি স্নানাগার তৈরি করে দেবেন এবং তার প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন। আর এতেই একেবারে অভিভূত হয়ে পড়েছেন জয়ন্ত।
তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল তাঁর মুখোমুখি হাজির হবার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আর তার ওপর তিনি আমাদের বাড়ির জন্য স্নানাগার তৈরি করে দেবেন এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। আমি এর জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। জয়ন্তর বাবা ভাদু দুলে অমিতাভ বচ্চনের নাম শুনেই তাঁর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালেন। বললেন, ওনার মতো মানুষ হয় না। উনি যে আমাদের কথা ভেবে এই প্রস্তাব দিয়েছেন ভাবতেই পারছি না। ওনার কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ।