ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ তো থাকেই। বাংলায় বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁদের ত্রাণ দিতে বাধা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এমনকী ত্রাণ দিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ। লকডাউনের প্রথম দিকে এমনও অভিযোগ উঠছিল রেশনের দ্রব্যসামগ্রী লুঠ করে সাধারণ মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। "প্রশাসন ত্রাণ দিলে বৈষম্য থাকে না," বুধবার মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে এমনই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বলেন, "সরকারের মাধ্যমে ত্রাণ দিলে কোনও বৈষম্য থাকে না। না হলে দেখা যাবে এক জায়গার মানুষ দু-তিনবার পেলেন, কোথাও আবার একবারও পেলেন না। তাই ত্রাণ দিতে হলে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, আইসিদের মাধ্যমে দিন।" ত্রাণ দিতে গিয়ে রাজনৈতিক রঙ যাতে কোনওরকম ভাবে না দেখা হয় সেই নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ত্রাণ থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হন। হতেই পারে কেউ আমার সমর্থক নন, কিন্তু তিনিও যেন বঞ্চিত না হন। সেই জেলা হবে সেরা জেলা যেখানে কোনও বঞ্চনার অভিযোগ আসবে না।"
এদিন বিভিন্ন জেলায় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়। যাঁদের নৌকার পুরো ক্ষতি হয়েছে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। মোট ১৭.২২ কোটি টাকা এই খাতে দেওয়া হয়েছে। ৩৭৭১১ জনের মাছ ধরার জালের ক্ষতি হয়েছে। তাঁদের জাল প্রতি ২৬০০ টাকা দেওয়া হয়। ৮০০৭টি ক্ষতিগ্রস্ত নৌকার মালিককে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া যাঁদের গবাদি পশু মারা গিয়েছে সেই ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরকে ৩৭ কোটি ও পশু চিকিৎসার জন্য ১২.৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
এদিন মমতা বলেন, "৯-১০ দিনের মধ্যে আমফানে ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা পেলেন। এটা আগে কখনও হয়নি। রাজ্য সরকারের করোনার ত্রাণ তহবিলে ১০০ কোটি টাকা উঠেছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ার কাজে সেই টাকা খরচ হয়েছে। এই তহবিলের থেকে টাকা নিয়ে স্কুলপড়ুয়া, আশাকর্মী, আইসিডিএস, অঙ্গনওয়াড়ি, সিভিল ডিফেন্স, একশো দিনের কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশদের জন্য ৩ কোটি মাস্ক তৈরি করা হবে।"
এদিন সেচ, বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন দফতরের কাজের প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, পথে প্রচুর বাস নেমেছে। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে পরিবহণ দফতর কন্ডাক্টর ও চালকদের জন্য বিমার ব্যবস্থা করছে। তবু কাউকে তাড়াহুড়ো করে অফিস আসতে হবে না। জোর করে ভিড় বাসে উঠতে হবে না। অফিসে আসতে দেরি হলে লাল কালির দাগ পড়বে না বা অ্যাবসেন্ট গন্য করা হবে না আগামী এক মাস। মাস্ক বাধ্যতামূলক করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর ২৪ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গির বিষয়েও সতর্ক থাকতে তিনি নির্দেশ দেন।