Advertisment

গনগনে সূর্যের তাপ মাথায় নিয়েই 'দই ফেরি', স্ত্রী’কে সুস্থ করতে প্রাণপাত বৃদ্ধের

চৈত্রের চড়া দাবদাহকে উপেক্ষা করেই লক্ষ্যে অবিচল আশি ছুঁইছুঁই বৃদ্ধ।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
An elderly man, curd seller, Heatwave Alert, তাপপ্রবাহের সতর্কতা, South Bengal Heatwave, দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহ, Loo, লু, Weather Forecast, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, Bengal Weather Update

গনগনে সূর্যের তাপ মাথায় নিয়েই দই ফেরি, স্ত্রী’কে সুস্থ করতে লড়াই জারি বৃদ্ধের

‘আগুন’ ঢালছে সূর্য! চৈত্রের চড়া দাবদাহকে উপেক্ষা করেই লক্ষ্যে অবিচল আশি ছুঁইছুঁই বৃদ্ধ। সকাল থেকে সাইকেল চালিয়ে বেরিয়ে পড়া। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত একটানা 'দই ফেরি' করা। কোনও দিন ১৫০ টাকা অথবা ২০০ টাকা সবমিলিয়ে আয়। স্ত্রীকে সুস্থ করতে এভাবেই লড়াই জারি রেখেছেন সুভাষগ্রাম, হরিনাভির বছর ৭৭-এর সমীর ভট্টাচার্য্য।

Advertisment

বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী। দুই ছেলের এক ছেলে থাকেন বারুইপুরে। দিন কয়েক আগেই স্ত্রীর ২ বার বাইপাস সার্জারি হয়েছে। আপাতত স্ত্রী একপ্রকার বিছানা নিয়েছেন। মাসে চার-থেকে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ সঙ্গে চিকিৎসকের খবর। সামাল দিতে আর কোন পথ না পেয়ে বৃদ্ধ বয়সে বেরিয়ে পড়েছেন সাইকেল নিয়ে নবদ্বীপের ক্ষীর দই ফেরি করতে।

বৈশাখ শুরু হতে এখনও বেশ কয়েকদিন বাকি, তার আগে চৈত্র মাসের শেষের ক’দিন মাত্রাছাড়া গরমে জেরবার বঙ্গবাসী। বিশেষ করে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে আগুন ঝরাচ্ছে সূর্য, যার জেরে বীরভূম, বাঁকুডা, পুরুলিয়ায় ৪০ ডিগ্রির গণ্ডিও পার হয়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। আগামী কয়েকদিন রাজ্যের একাধিক জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। বিশেষ প্রয়োজন না হলে সকালের দিকে বাড়ি ছেড়ে না বেরোতেই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এমন সময়ে নিজের লক্ষ্য অবিচল সমীরবাবু। স্ত্রীকে যে সুস্থ করে তুলতেই হবে। সমীরবাবুর এই কাহিনী হার মানাবে যে কোন সিনেমার চিত্রনাট্যকেও। বাস্তবের কঠোর জীবনসংগ্রামে নজির গড়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই সমীরবাবুর এই জীবনসংগ্রামের চিত্র ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া ফোনে এক সাক্ষাৎকারে সমীরবাবু বলেন, “আগে বরাহনগরের এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতাম। অবসরের পর যেটুকু গচ্ছিত ছিল তা স্ত্রীর’ বাইপাস সার্জারিতে খবর হয়েছে। পাশাপাশি কোভিড কালে উপার্জন ছিল শূন্য। ২ ছেলের একজন কাজ করেন ওষুধের দোকানে, আর একজন একটি টেলিকম সংস্থায় সামান্য বেতনে। এক ছেলে থাকেন বারুইপুরে। তাদের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। এমন অবস্থায় স্ত্রী শয্যাশায়ী। তার মাসে ওষুধ চিকিৎসা বাবদ খবর হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা মত। এরপর সংসার খরচ। আগে বাড়ি বাড়ি কয়লা সাপ্লাই দিতাম। কিন্তু এখন গ্যাস এসে যাওয়ায় সে ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। অগ্যতা নবদ্বীপের ক্ষীর দই ফেরি করেই সংসার চলে”।

তিনি আরও বলেন, “আগে সেরকম একটা বিক্রি হত না। জনৈক এক শুভাকাঙ্ক্ষী ফেসবুকে আমার কথা তুলে ধরে তারপর থেকে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। দৈনিক ১০-১২ কেজি দই বিক্রি করে সামান্য ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা উপার্জন হয়। তার সবটাই প্রায় স্ত্রীর চিকিৎসায় খরচ হয়ে যায়। ওঁকে যে সুস্থ করে তুলতেই হবে”। সমীর বাবুর এই জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সমাজের সকল স্তরের মানুষ। ইতিমধ্যেই অনেকেই নানাভাবেই পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। কাঁপা গলায় সমীরবাবুর আক্ষেপ, বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদন করেও তা পায়নি। বহুবার গিয়েও সমাধান হয়নি। সামান্য বার্ধক্যভাতা পেলেও আমার কিছুটা সুরাহা হত”!

kolkata news
Advertisment