আবারও থমকাল ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিডের কাজ, পাওয়ার গ্রিডের খুঁটি বসানোর কাজ বন্ধ করে দিলেন গ্রামবাসীরা। চুক্তি মোতাবেক কথা ছিল, পাওয়ার গ্রিডের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ হবে পাল্লা দিয়ে। অথচ, সাব ষ্টেশনের ভিতরে ও বাইরে সব কাজ দ্রুতগতিতে হলেও এলাকার উন্নয়নের ব্যপারে সরকার "লবডঙ্কা দেখাচ্ছে"। এই অজুহাতে বৃহস্পতিবার পাওয়ার গ্রিডের খুঁটি বসানোর কাজ বন্ধ করে দিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন গ্রামবাসীরা।
এরপরই এলাকায় তড়িঘড়ি ছুটে যান ভাঙড়ের সিআই সৌগত রায় সহ পিজিসিআইএল-এর কর্তারা। দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা চলে। যদিও প্রশাসনের আধিকারিকেরা গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হন।
আরও পড়ুন: পুজো কাটতেই ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের কাজ পুরোদমে শুরু
এদিকে বুধবার থেকে তিনদিনের জেলা সফরে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক এই মুহূর্তে ভাঙড়ের আন্দোলন নতুন করে চাগাড় দিতে স্বভাবতই মাথায় হাত প্রশাসনিক আধিকারিকদের। কাজেই এদিন পাওয়ার গ্রিডের টাওয়ার তৈরির কাজ বন্ধের কথা শুনে এলাকায় ছুটে গিয়ে কমিটির নেতাদের বোঝানোর মরিয়া চেষ্টা করেন তাঁরা। এর পাশাপাশি এলাকায় উপস্থিত হন পিজিসিআইএল-এর কর্তারা। তাঁরাও গ্রামবাসীদের বোঝাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা বার্তা দেন, আজ, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসা হবে। যা সমস্যা আছে দেখা হবে।
কিন্তু সেই বার্তাতেও চিড়ে ভেজেনি। জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান প্রশাসনের কর্তাদের স্পষ্ট বলে দেন, আগে এলাকার উন্নয়ন, তার পর কাজ। যদিও শেষ পর্যন্ত মির্জা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে "আলোচনা" করবেন। গ্রামবাসীরা সায় দিলে তবেই গ্রিডের কাজ পুনরায় শুরু হবে।
উল্লেখ্য, পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের জেরে প্রায় দেড় বছর সাব স্টেশনের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পর গত ১৪ অগাস্ট থেকে আলোচনা মারফৎ পুনরায় কাজ শুরু করেন গ্রিড কর্তৃপক্ষ। গত তিন মাস সাব স্টেশনের ভিতরে কাজ চললেও সাব স্টেশনের বাইরে মাঠে জল জমে থাকায় টাওয়ারের কাজ শুরু করা যায়নি। চলতি মাসের শুরুতেই তিনটি টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হয়।এই টাওয়ারগুলি দিয়েই পূর্নিয়া থেকে ৪০০ কেভি লাইন সাব স্টেশনে প্রবেশ করবে।
আরও পড়ুন: ভাঙড়: টাকার অঙ্ক নিয়ে রফা করতে আলোচনা শুরু
বৃহস্পতিবার সকালেই মাছিভাঙা, খামারাইট থেকে বেশ কিছু গ্রামবাসী মাঠে গিয়ে ঠিকা শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করতে বলেন। ফলে সকাল থেকেই হাত পা গুটিয়ে বসে পড়েন শতাধিক শ্রমিক। এ বিষয়ে জমি কমিটির নেতা মোশারেফ হোসেন বলেন, "চুক্তি অনুযায়ী সাব স্টেশনের কাজের সঙ্গে সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন সহ আমাদের বিরুদ্ধে যে সব কেস আছে তা প্রত্যাহার করার কথা ছিল, কিন্তু তা না করে সাব স্টেশন সহ টাওয়ার তৈরির কাজ জোর কদমে চলছে, তাই আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।" তিনি আরো বলেন, "চুক্তি অনুযায়ী কাজ না হলে মানুষ যে আবার পথে নামতে তৈরি, সেটা আজ ফের প্রমাণ হল।"
মির্জা হাসান বলেন, "জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়েছিল, ভাঙড়ের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে। সেসব কিছুই হয়নি। এলাকার উন্নয়ন না করে শুধু পাওয়ার গ্রিডের উন্নয়ন করা যাবে না। তাই মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।" তিনি আরও বলেন, "প্রশাসন যদি মনে করে জোর করে কাজ করবে, তাহলে আবার ভাঙড়ে আগুন জ্বলবে।"