না শুনলে বিশ্বাস করাটা রীতিমত কঠিন। মঞ্চে তিনি যখন গান গান, খানিক নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন শ্রোতারা। সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি আওড়ান অনেকেই। দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখার্জির গাওয়া একের পর এক ‘আইকনিক’ গান গেয়ে চলেছেন অত্যন্ত সাবলীল ভাবেই। তিনি শিল্পী অনিমেষ শিকদার। তবে শুধু সন্ধ্যা মুখার্জি নয়, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকর, আরতি মুখোপাধ্যায়-এর মত প্রবাদ প্রতিম শিল্পীদের গান গাওয়াতেও তিনি রীতিমত ‘ওস্তাদ’। তাঁর এমন প্রতিভা দেখে অনেকে তাজ্জব হলেও গান শুনে মুগ্ধ না হয়ে কোন উপায় নেই। দাদাগিরির মঞ্চেও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি।
কৈশর থেকেই সংগীতের প্রতি অনুরাগ। গান গাওয়াটা তাঁর কাছে একটা নেশার মত। সেই ছোট থেকেই শুনে শুনে গুনগুন করে গান গাওয়ার অভ্যাস। শ্যামল মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানেই বড় হওয়া। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীকন্ঠে গান গাওয়ার দক্ষতা বুঝতে পেরে ‘মহিলা শিল্পীদের’ গাওয়া গান শুরু করেন তিনি। বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা। দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে একের পর এক উপহার দিয়েছেন সন্ধ্যা মুখার্জীর ‘চিরসবুজ’ গান। যা শ্রোতাদের মনের মণিকোঠায় আজও অমলিন হয়ে রয়েছে। ৪৩ বছর ধরে মিলেছে লাখো শ্রোতাদের ভালবাসা। এটাই আগামীতে এগিয়ে চলার শক্তি জুগিয়েছে শিল্পী অনিমেষ শিকদারকে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন তাঁর গান রীতিমত ভাইরাল।
আরও পড়ুন: < বিলাসিতায় মোড়ানো রাজকীয় ভ্রমণ, ‘ভারত গৌরব স্পেশালে’ ঘুরে আসুন কলকাতা থেকে বৈষ্ণো দেবী >
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা হিসাবে কর্মরত তিনি। নিজের এই কেতাদুরস্ত প্রতিভা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “ছোট থেকে দিদির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গান গাইতাম। বরই সুরেলা কণ্ঠ ছিল দিদির। ছোট বেলায় শ্যামল মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গান গেয়েই বড় হওয়া। কৈশর পেরিয়ে বয়ঃসন্ধির সময় উপলব্ধি করলাম আমি আর আগের মত গাইতে পারছি না। কথা বলার স্বরকে চেপে রেখে নারী কন্ঠে গান শুরু করি। আস্তে আস্তে নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করে। তখনই বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শে অন্যসব গান ছেড়ে সন্ধ্যা মুখার্জির গান গাওয়া শুরু করি। সেই থেকেই শুরু পথ চলা। দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে ওনার গাওয়া গায়েই পরিণত হয়েছি আমি”।
আরও পড়ুন: < কর্পোরেট ছেড়ে ফুটপাত! গনগনে আঁচে হাত পুড়িয়ে কাবাব বিক্রি, ‘রোস্টেড কার্টের’ জার্নি অবাক করবে >
সন্ধ্যা মুখার্জির সেই সব ‘আইকনিক’ গান প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, ওনার গাওয়া রীতিমত কঠিন। অন্য কিছু নিয়ে আর পরীক্ষা নিরীক্ষা করার আর সময় ও সাহস পাই না। ভয় হয় অন্য কিছু গাইতে গেলে যদি এই স্বর হারিয়ে ফেলি! ওঁর গান গাইলে মন ভাল হয়।
প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝেই নিয়ম করে গান করেন তিনি। নিয়মিত তা আপলোডও করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই সঙ্গে অজস্র মানুষের আবদার রাখতে গাইতে হয় তাঁদের পছন্দের গানও। শিল্পীর শিরার শিরায় জড়িয়ে রয়েছে সন্ধ্যা মুখার্জির গান। শ্রোতাদের কাছ থেকে মিলেছে অসীম ভালবাসা যা শিল্পীকে আগামীর এগিয়ে চলার শক্তি জুগিয়েছে। শিল্পীর কথায়, ‘আপামোর শ্রোতা আমার গান ভালবাসেন। আর গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখার্জির গাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার’।