কিছু সম্পর্কের আভিধানিক ব্যাখা হয় না। সোমা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর আদরের বিড়াল 'পুকু'র সম্পর্ক ছিল এমনই। কিন্তু অজান্তেই ছেদ সেই সম্পর্কে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না পুকুকে। পাড়া, প্রতিবেশী, পুলিশকেও জানিয়েছেন। সুরাহা হয়নি কোনও কিছুতেই। অগত্যা পোস্টারে প্রচারকেই হাতিয়ার করলেন সোমাদেবী। জানালেন স্থানীয় থানাকেও।
ঠিক কী হয়েছে?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সোমা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "বারাসাত থানায় গিয়েছিলাম। গত মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর থেকে হঠাৎই হারিয়ে গেল। একদম আমার মেয়ের মতো ছিল। জন্ম থেকে নয়, তব একদম ছোটো থেকেই ছিল। প্রায় দেড় বছর ছিল। এতোটাই ভালোবাসার ছিল। যা বলব তাই শুনতো। ও দেখতে খুব সুন্দর। দু দিন ধরে খাওয়ার দিয়ে ডাকার পরও আসেনি। পরে সন্দেহ হওয়ায় আমি শুনি পাশের এক বাড়িতে বলা হচ্ছে সকালে বেড়াল ফেলে দিয়ে এসেছি। কোনও দিন আর ফিরে আসবে না।"
২৬ নভেম্বর থেকেই পাওয়া যাচ্ছে না বিড়ালটিকে, জানালেন সোমাদেবী
মুহ্যমান গলায় সোমাদেবী বলে চলেন, জানেন ও খুব ভীতু ছিল। গত বছরেই ওর একটা বড়ো অপারেশন হয়েছিল। ইউটেরাসে ইনফেকশন হয়েছিল। অনেক ছোটো ছিল ও। কিন্তু তারপর ওর অপারেশনও করাই বাড়িতেই। ১ ঘন্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলেছিল। পরে ওকে মেঝেতেই বিছানা করে চারিদিকে বালিশ দিয়ে মশারী টাঙিয়ে শুয়ে দিয়েছিলাম। সারারাত ওর পাশে জেগে বসে ওকে অল্প অল্প জল দিয়ে মুখ মুছিয়েও দিয়েছি। তিন দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। ও আমাদের পরিবারেরই একজন।
এক নিঃশ্বাসে সোমা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন পুকুর স্মৃতি। স্কুল শিক্ষিকা সোমাদেবী বলেন, "ওর নাম দিয়েছিলাম পুকু। ডাকলেই চলে আসত। সকালে মাছ-ভাত খেত। খুবই সামান্য। কিন্তু ঘুরে ঘুরে খেত। কোথাও যেত না। কারুর কোনও অভিযোগ ছিল না। ভীষণ সংবেদনশীল ছিল ও। কত জায়গায় খুঁজেছি ওকে। কোনওভাবেই পেলাম না। ১০০ কপি ছবি বানিয়েছি, পিছনে নাম্বার লিখে সবাইকেই সেই লিফলেটও বিলি করেছি। আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় এই পোস্টার লাগিয়েছি। বারাসাত থানায় বিড়ালের নামে ডাইরি করতে গিয়ে মনে হল ওনারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। পরে নিখোঁজের বোর্ডেই সেই বিজ্ঞাপনটি দিয়ে এসেছি। আমার মেয়েও খুব কান্নাকাটি করেছে ওকে না পেয়ে। ঠাকুরের কাছে মাথা ঠুকে কপাল ফুলিয়েছে। আমি আর এখন ধৈর্য রাখতে পারছি না। আমার মেয়ে হারিয়ে গেলে যেরকম কষ্ট হবে, ঠিক তেমনই হচ্ছে। বাধ্য হয়েই ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছি।" আদরের পুকু ফিরবে কি না জানেন না, শূন্য পথে ফিরে স্মৃতিকেই আগলে রাখছেন বারাসাতের মিত্র পাড়ার গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার।