মহাসপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নানের মাধ্যমে শুরু হয় দুর্গার উপাসনা। সাধারাণত গঙ্গা, পুকুর স্থানীয় জলাশয়ের জলেই হয় কলাবউ স্নান। কিন্তু হাওড়ার উলুবেড়িয়ার নারিটের জমিদার ক্ষেত্রমোহন দত্তের বাড়িতে কলাবউ স্নানের ভিন্ন নিয়ম। এ বাড়ি থেকে নবপত্রিকাকে নিয়ে কোনও গঙ্গা বা জলাশয় নিয়ে যাওয়া হয় না। বাড়িতেই রয়েছে বেলতলা। সেখানেই তামার পাত্রে নবপত্রিকা স্নানের রীতি চালু আছে।
Advertisment
কেন এই নিয়ম? দত্ত বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের দাবি, কয়েক শতাব্দী আগে ওই এলাকায় পুকুর ছিল না। গঙ্গাও বেশ দূরে। ঘনঘন বৃষ্টি হওয়ার কারণে পুজোর সময় এলাকা অনেক সময় জলমগ্ন হয়ে যেত। এসব কারণে শুরু থেকেই বেলতলায় কলাবউ স্নান হয়ে থাকে। নবপত্রিকাকে করানো স্নানের জল যাতে মাটিতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্যেই এই নিয়ম পালন হয়ে আসছে।
এ বাড়িতে কীভাবে শুরু হল দেবী উমার উপাসনা? সে ইতিহাসও বেশ মনগ্রাহী। নাতনির মেয়েকে একবছর বয়সে দত্তক নিয়েছিলেন নারিটের জমিদার ক্ষেত্রমোহন দত্ত। একরত্তি মেয়েকে খেলার জন্য পুতুল দিয়ে ভরিয়ে রেখেছিলেন ক্ষেত্রমোহনবাবু। একটু জ্ঞান হতেই ওই মেয়ে জমিদারের কাছে শরৎকালে দুর্গাপুজো করার আবদার জুড়েছিল। কিন্তু তাতে কান দেননি জমিদারবাবু। এরপর আরও বেশকিছু বছর গড়িয়েছে। এবার সেই ছোট্ট মেয়েটির জ্ঞানও আরও টনটনে হয়েছে। ক্ষেত্রমোহন একদিন দেখেন, তাঁর দত্তক কন্যা নিজের হাতে মায়ের মূর্তি গড়তে ব্যস্ত। আর সময় নষ্ট করেননি জমিদার। শুরু হয় দত্ত বাড়িতে দুর্গা পুজো।
জমিদার বাড়ির সামনে প্রশস্থ এলাকায় মায়ের পুজো শুরু হয়। সেই আটচালায় আজও নিয়ম নিষ্ঠান হয় দুর্গাবন্দনা। আগে বলি হলেও এখন আর তা হয় না। যাত্রা, গান বাজনার আসও বন্ধ। জৌলুস কমেছে, তবে উন্মাদনা সেই আগের মতই রয়েছে। এখন পঞ্চমীর দিন নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা দত্ত পরিবারের সদস্যরা নারিটে ফেরেন। নিষ্ঠার সঙ্গে হয় দুর্গা পুজো। সপ্তমীর দিন অতিথিজ্ঞানে খাওয়ানো হয় সকলকে।