বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসে কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজে দিনভর ধূমপান বিরোধী প্রচার চালালেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কফি হাউজ সোস্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারাও। এছাড়াও প্রকাশ্যে ধূমপানের সংস্কৃতি রুখতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে শুক্রবার।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মান্ট-এর উদ্যোগে কফি হাউজের ঐতিহ্যবাহী সিঁড়িতে এদিন তামাক বিরোধী পোস্টার লাগানো হয়। তারপর সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকেরা টেবিলে টেবিলে গিয়ে ধূমপায়ীদের অনুরোধ করেন, সিগারেট ফেলে দেওয়ার জন্য। এই প্রচারে দৃশ্যতই সাড়া মিলেছে। অনেকই স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিশ্রুতি দেন কফি হাউজের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে আর প্রকাশ্যে ধূমপান করবেন না। মান্ট-এর কর্মীদের পাশাপাশি কফি হাউজ সোস্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও বিভিন্ন টেবিলে গিয়ে হাত জোড় করে শহরের ওই ঐতিহ্যবাহী আড্ডাখানায় ধূমপান না করার অনুরোধ করেন।
প্রায় আড়াই দশক যাবত নিয়মিত কফি হাউজে আসেন সরকার অনুমোদিত কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অম্বরীশ দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, "অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। সরকার তো আইন করে জানিয়েছে, প্রকাশ্যে ধূমপান করা যাবে না। কফি হাউজের মতো জায়গার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। কিন্তু অনেকে ঐতিহ্যের প্রশ্ন তুলবেন।"
সে প্রশ্ন অবশ্য উঠেছেও। বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা দেবলীনা রায়ের কথায়, "বাংলা সংস্কৃতির খ্যাতনামা ব্যক্তিদের প্রায় সবাই এখানে আসতেন, আসেন। তাঁদের অনেকেই ধূমপান করতেন। এই রেওয়াজ গায়ের জোরে বা আইনের জোরে বন্ধ করার চেষ্টা করা অনুচিত। সেক্ষেত্রে কফি হাউজের চরিত্রটাই বদলে যাবে। খুব সমস্যা হলে হাউজের মধ্যেই একটা স্মোকিং জোন তৈরি করা যেতে পারে।"
প্রসঙ্গত, গত ২০০৩ সাল থেকে খাতায়-কলমে কফি হাউজে ধূমপান নিষিদ্ধ। সেই মর্মে বোর্ডও ঝোলানো রয়েছে। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার ধূমপায়ীদের।
মান্টের শীর্ষকর্তা নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় বলেন, "কফি হাউজের মতো প্রতিষ্ঠানে ধূমপানের যে চল রয়েছে, তা খুব ভাল বিজ্ঞাপন নয়। এই সংস্কৃতিকে বদলে দেওয়ার লক্ষ্যেই আমাদের এই প্রয়াস। কফি হাউজের সোস্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব অচিন্ত্য লাহা ঐতিহ্যের প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তাঁর কথায়, এক সময় তো সতীদাহ প্রথা ছিল। আমরা কি সেই ঐতিহ্যকে মান্যতা দিয়েছি? ঐতিহ্যের সদর্থক দিকটুকুই গ্রহণীয়।"
শহরে এদিন আরও একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মেডিক্যাল ব্যাঙ্ক নামে একটি সংস্থার উদ্যোগে সাতটি স্কুলের পড়ুয়ারা শোভাবাজার মেট্রোর সামনে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ পরে তামাক বিরোধী প্রচার করে। সংগঠনের কর্তা ডি আশিস জানান, গত দশ বছর যাবত তাঁরা এমন প্রচার করে আসছেন। যাদবপুর থেকে গড়িয়াহাট পর্যন্ত তামাক বিরোধী মিছিল করেন একাধিক সংগঠনের সদস্যরা।