'কেন কেষ্টকে গ্রেফতার করা হল? ও কি করেছে?' তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির সিবিআই গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট করেছিলেন যে, নেত্রীর আশীর্বাদের হাত অনুব্রত মণ্ডলের মাথায় রয়েছে। এরপরই মুখ খুলেছেন 'দিদি'র অনুগত জেলবন্দি কেষ্ট। এমনটাই দাবি তাঁর আইনজীবীর।
সোমবার অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেন তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা। আইনজীবীর কাছেই তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে নেত্রীর অবস্থান সম্পর্কিত নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন অনুব্রত। আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা বলেছেন, 'উনি (অনুব্রত মণ্ডল) আগে থেকেই জানতেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ওনাকে সাপোর্ট করেছেন বা ভরসা জুগিয়েছেন। ওনার অ্যারেস্ট সম্পর্কে বলেছেন যে, অত্যন্ত অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেটা আমরাও আদালতেও বার বার বলেছি। দলনেত্রী সাপোর্ট করায় ওনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন যে, আমি জানতাম যে দিদি আমার পাশে এসে দাঁড়াবে। আমার সঙ্গে ঘটনার কোনও যোগ নেই। আমাকে অন্যায়ভাবে ধরা হয়েছে। অত্যন্ত অসুস্থ উনি, কিন্তু দিদির সাপোর্ট পেয়ে ওনার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।'
১১ অগাস্ট বোলপুরের বাড়ি থেকে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে গরু পাচারকাণ্ডে গ্রেফতার করে সিবিআই। যা নিয়ে রবিবার মুখ খোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বেহালার ম্যানটনে এক অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'কেষ্টকে গ্রেফতার করা হল, কী করেছিল ও? ইলেকশনে তো ওকে ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছিল। একটা ইলেকশনেও ওকে বেরতে দেয়নি। কিন্তু কেষ্টকে আটকালে কী হবে? ছেলেটা গত দু’বছর খুব কষ্ট পেয়েছে। ওর স্ত্রী, তার আগে মা মারা গেছে। আমি ওকে এমপি, এমএলএ হতে বললেও ও বলত হব না। রাজ্যসভায় যেতে বললেও যায়নি। ওদের এজেন্সিতে কিছু লোককে টাকা দিয়ে পোষে। তারা প্রথম থেকে শুধু বদনাম করে। পরে কিন্তু জিরো, কেসে কিছুই হল না। জেনে রাখুন ২০২৪-এ বিজেপি আর জিতবে না। তাই বলি দুর্বল হবেন না, এদের বিচার জনগণের আদালতে হবে। এক কেষ্টকে ধরলে লক্ষ কেষ্টরা রাস্তায় তৈরি হবে।'
অনুব্রতর প্রতিক্রিয়ার পরই সোচ্চার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব। বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, 'পুলিশকে বোম মারা থেকে শুটিয়ে লাল সহ এর আগে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবারই তাঁক ভালো ছেলে বলে পাশে দাঁড়িয়েছেন। অন্যদিকে কেষ্টর সম্পত্তি বেড়েছে। আবার বলছেন কেষ্টর মত লক্ষ লক্ষ নেতা তৈরি হবে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। ইডি, সিবিআই ওঁর বাড়ি যেতে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন। এরা শুধরানোর নয়।' সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, 'অনুব্রতর কথা মত মুখ্যমন্ত্রী পাশে দাঁড়ানোয় প্রমাণ হয়ে গেল যে মমতা ব্যানার্জী সব জানতেন। বেহালায় গিয়ে অনুব্রত পাশে দাঁড়ালেন মমতা, অথচ পার্থর হয়ে কিছু বললেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে তাহলে প্রশ্ন যে, পার্থ যে দোষী উনি কী সেটা জানতেন?'
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, 'দিদি সবই জানেন। অনুব্রতর পাশে দাঁড়াচ্ছেন, কিন্তু দিদি পার্থর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। এটা বৈষম্য করছেন উনি। আসলে দিদির অঙ্গুলিহেলন ছাড়া পার্থ, অনুব্রত কেউ চুরি করতে পারতেন না। হাজার হাজার অনুব্রত এমনিতেই তৃণমূলে জন্মে দিয়েছে।'