মালদহে মধ্যযুগীয় বর্বরতা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতেও। ভাইরাল হওয়া ভিডিও ঘিরে তুমুল সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিজেপি থেকে শুরু করে বাম, কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন সরকারকে তুলোধনা করে সোচ্চার হয়েছে। মালদহের বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা রাজনীতি করছে বলে পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূল।
শনিবার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে মালদায় দুই আদিবাসী মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধর করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, বর্তমানে দুই নির্যাতিতাই জেলে আছেন। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দল বিজেপি। ঘটনাটি গত মঙ্গলবারের। নির্যাতিতার মেয়ে জানিয়েছেন, তাঁর মা ও কাকিমা লেবু বিক্রি করতে গত মঙ্গলবার হাটে গিয়েছিলেন। সেখানেই এক মিষ্টি বিক্রেতা তাঁদের চোর বলে। সঙ্গে সঙ্গে চোর সন্দেহে মা ও কাকিমাকে মারধর করে হাটের লোকজন। কাপড় খুলে মারধর করা হয় বলে দাবি কিশোরীর।
এদিকে, আদিবাসী দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতি। তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ তলানিতে ঠেকেছে বলে তোপ বিরোধীদের। তারই জেরে এই ঘটনা বলে সোচ্চার বিজেপি, বাম, কংগ্রেস।
আরও পড়ুন- অভূতপূর্ব সাফল্যে ফের ‘বাংলা শ্রেষ্ঠ’ কীর্তিমান! সোনার সম্মানে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস!
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর মালদহে আদিবাসী মহিলাদের উপর এই অত্যাচারের পাশাপাশি ভোটের দিন হাওড়ার পাঁচলায় মহিলার উপর অত্যাচার নিয়েও সরব। তাঁর কথায়, 'মালদহে দুই মহিলাকে মেরে অর্ধনগ্ন করে ঘোরানো হচ্ছে। কোথায় গেল মমতা দিদির সরকার? কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে? মালদহের ঘটনা নিয়ে কেন চুপ রাজ্য সরকার? হাওড়ার পাঁচলার ঘটনাতেও সরকার নীরব। মমতাদিদির মনে কী মমতা আছে? পাঁচলায় মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছে। জোটের নেতারা কেন বাংলা নিয়ে চুপ? বাংলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। মমতা দিদি কী বানিয়ে ছেড়েছেন বাংলাকে! বাংলায় নারী নির্যাতনকারীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে। বাংলায় মমতা নির্মমতার প্রতীক।'
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'এই বাংলায় নারী নির্যাতনের সংখ্যা ভারতের নিরিখে এক থেকে পাঁচের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। এমন অনেক নারী নির্যাতনের ঘটনা পুলিশ-সরকার ও সন্ত্রাস দিয়ে থামানো হয়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। উদাহরণমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই আমাদের দাবি।'
আরও পড়ুন- দুই আদিবাসী মহিলাকে বিবস্ত্র করে মার! শিউরে ওঠা বর্ণনা শোনালেন নির্যাতিতার মেয়ে
সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাত বলেন, 'বাংলার এই ঘটনা নিন্দনীয়। আদিবাসী মহিলাকে বস্ত্রহীন করে ঘোরানো হচ্ছে। ওই এলাকায় বিজেপির সাংসদ আছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আইনশৃঙ্খলার অবনতির দিকটিই তুলে ধরছে এই ঘটনা।'
যদিও মালদহের এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। মন্ত্রী শশী পাঁজা এদিন বলেন, 'মালদহে একটা বিশাল হাট। সেই হাটে অনেকেই আসছেন জিনিস কিনতে। এটাও বলা হচ্ছে হয় তো এরা গরিব মানুষ, হয় তো চুরি করেছেন। মহিলা মহিলায় ঝগড়া হয়েছে। তাতেই হয়তো জামা-কাপড় খুলে গেছে। এটা কি রাজনৈতিক কোনও বিষয়? ওখানে লেডি সিভিক পুলিশ ছিলেন। তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ঝগড়া মেটানোর। তারপর ওই দুই মহিলা চলেও যান। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা হয়েছে।'