শান্তিনিকেতনের মুকুটে স্বীকৃতির আরও এক পালক, ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় স্থান পেয়েছে কবিগুরুর শান্তিনিকেতন। উচ্ছ্বাস-আনন্দের ঢেউ বাংলায়। কিন্তু শুধুই শান্তিনিকেতন নয়, পশ্চিমবঙ্গের আরও বেশ কয়েকটি স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ এবং তার উপকূলীয় অঞ্চল পূর্ব ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। স্থানটির ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। এই অঞ্চল গুপ্ত, পাল ইত্যাদির বিশ্ববিখ্যাত শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। তাই, রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গা ঐতিহাসিক ভাবেই স্বীকৃত।
একনজরে বাংলায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকা-
১ সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান
সুন্দরবন স্রেফ সুন্দরি গাছের নামাঙ্কিত ম্যানগ্রোভের জঙ্গল নয়, ১৯৮৭ সাল থেকে সুন্দরবন একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। সুন্দরবন বৃহত্তর বাংলার রক্ষাকবচও বটে। একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে দুই বাংলাকেই রক্ষা করে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ আবরণ, বা বলা ভাল বর্ম। তাছাড়া রয়েছে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাস, এবং লবণাক্ত জলের ধারা, যা ম্যানগ্রোভের জঙ্গল না থাকলে ঢুকে পড়ত আমাদের নদী-খাল-বিলে। এছাড়াও সুন্দরবনের হাজার হাজার খাঁড়িতে নানা প্রজাতির মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন অসংখ্য মৎস্যজীবী (ভারতীয় সুন্দরবনের জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ), যাঁদের বাস এই অঞ্চলের ছোটবড় নানান দ্বীপে।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণভূমি শুধু নয়, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অঞ্চগুলির মধ্যে অন্যতম এই এলাকায় সহবাস করে আরও অসংখ্য প্রাণী, সঙ্গে অজস্র প্রজাতির গাছ। ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, এবং মেঘনা নদীর ত্র্যহস্পর্শে গড়ে ওঠা এই ব-দ্বীপ (ডেল্টা) ভারতের বৃহত্তম সংরক্ষিত জলাভূমিও বটে। মোট ব্যাপ্তি প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিমি, ভারতের ভাগে পড়েছে ২,১১৪ বর্গ কিমি। দেশে যত ম্যানগ্রোভ আবরণ রয়েছে, তার ৪৩ শতাংশই সুন্দরবনে। প্রায় ১০০ টি বাঘ ছাড়াও এখানে বিচরণ করে কুমির, কাছিম, শুশুক, এবং নানাবিধ পরিযায়ী পাখি।
সুন্দরবন না বাঁচলে যে বৃহত্তর পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশও বাঁচবে না, সে সম্পর্কে বিশেষ সন্দেহের অবকাশ নেই। ম্যানগ্রোভ বেঁচে থাকলে তা শক্তিশালী দেওয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারবে ঘূর্ণিঝড়ের সামনে, ঘন জঙ্গলে আবদ্ধ হয়ে কমে যাবে হাওয়ার তীব্রতা। হ্যাঁ, সেই ধাক্কা সামলাতে গিয়ে জখম হবে অনেক গাছ, কিন্তু তাদের জায়গা নেবে নতুন গাছও। সতত পরিবর্তনশীল এই অঞ্চলের ভূমি-গঠন এটা নিশ্চিত করে যে, পরিবেশকে সুরক্ষিত রেখে এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটিয়ে ফের গজিয়ে উঠবে ম্যানগ্রোভ।
২ দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে হল দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত টয় ট্রেন পরিষেবা, যা ১৮৭৯ থেকে ১৮৮১ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। এই রুটে ট্রেন চলাচল করে মোট ৭৮ কিলোমিটা, রয়েছে ১৩টি স্টেশন। এছাড়াও, এটি পাহাড়ের গা বেয়ে চলা বিশ্বের সর্বোচ্চ এবং প্রাচীনতম ট্রেন রুট, যা ৭ হাজার ফুট উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত। দুনিয়াজুড়ে এর জনপ্রিয়তা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে, ইউনেস্কো দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েকে ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বলে ঘোষণা করেছে।
৩ শান্তিনিকেতন
কবিগুরুর শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউনেস্কো। বঙ্গভঙ্গের পটভূমিতে শান্তিনিকেতন বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার শৈল্পিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নবজাগরণের মূলে পরিণত হয়েছিল। কেন্দ্রের তরফে ২০১০ সালে শান্তিনিকেতনের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিল। যা মিলল ২০২৩-এ।
শান্তিনিকেতন সংসদের একটি আইন, ১৯৫১ শান্তিনিকেতন আইন দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। এটি ছিল ভারত সরকার কর্তৃক ঘোষিত প্রথম সেন্টার ফর এক্সিলেন্স।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বিখ্যাত বিশ্বভারতী তৈরি করেছিলেন, যেখানে সমগ্র বিশ্ব থেকে শিক্ষার্থীরা সমৃদ্ধ ভারতীয় বৈচিত্র্যময় শিক্ষার পাঠ নিতে আসে। এছাড়াও, পর্যটকরা শান্তিনিকেতনে স্থানীয় গ্রাম, মেলা এবং জাদুঘরও ঘুরে দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন- ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ: সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিতে ‘এগিয়ে বাংলা’, তালিকায় এবার কে কে?