Advertisment

যাদবপুরকাণ্ডে বিস্ফোরক প্রবল চর্চায় থাকা সেই 'আলু', কী বললেন?

পুলিশের খাতায় এখনও সন্দেহভাজন না হলেও ভাইরাল অরিত্র ওরফে 'আলু'র নাম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
aritra majumdar alias alu speaks up on jadavpur university student death case , যাদবপুরকাণ্ডে বিস্ফোরক প্রবল চর্চায় থাকা সেই 'আলু', কী বললেন?

অরিত্র মজুমদার ওরফে 'আলু'।

যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় এবার মুখ খুললেন অরিত্র মজুমদার ওরফে 'আলু'। এই মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার ১৩ জন। তবে, আতচকাচে 'আলু'র ভূমিকা। পুলিশের খাতায় এখনও সন্দেহভাজন না হলেও ভাইরাল অরিত্র ওরফে 'আলু'র নাম। এই প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে গবেষণারত অরিত্র মজুমদার।

Advertisment

ঘটনার কয়েকদিন পর থেকে তাঁর নাম উঠলেও কেন এদিন নীরবতা ভাঙলেন অরিত্র? পোস্টের শুরুতেই এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন 'আলু'। ফেসবুকে লিখেছেন, 'আমি অরিত্র মজুমদার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে গবেষণারত। সম্প্রতি যাদবপুর মেন হোস্টেলে একজন ছাত্রের অত্যন্ত মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় নানা মিডিয়ায় এবং সামাজিক মাধ্যমে আমার নামে বেশ কিছু অভিযোগ, প্রশ্ন ও মন্তব্য উঠে এসেছে। কলকাতার বাইরে, বলা ভালো, নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে থাকায় সেই কথাগুলো আমার কাছে এতদিন পৌঁছয়নি। পৌঁছলে আগেই উত্তর দিতাম। আমার অনুপস্থিতিতে সন্দেহ-অভিযোগগুলো অতিকায় আকার ধারণ করেছে। ফলে, কয়েকটা কথা লেখার প্রয়োজন হয়ে পড়ল। যে-মানসিক অবস্থায় আছি, তাতে কতখানি গুছিয়ে লিখতে পারব জানা নেই। সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।'

সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে ওঠা অভিযোগগুলিকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন অরিত্র মজুমদার। প্রথমত: ৯ আগস্ট গভীর রাতে যাদবপুর মেন হোস্টেলে যে মর্মান্তিক ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তিনি জড়িত কিনা, কেন পালালেন? দ্বিতীয়ত: যাদবপুর মেন হোস্টেলে ঘটনার সময় 'আলু' উপস্থিত ছিলেন কিনা?

প্রথম অভিযোগের জবাবে অরিত্র মজুমদার ওরফে 'আলু' লিখেছেন, '৯ আগস্ট রাতে আমি যাদবপুরের মেন হোস্টেলে ঢুকিইনি। এমনকি, তার আগের বেশ কিছুকাল আমি হোস্টেলে যাইওনি। আমি সেই রাতে কেপিসি হাসপাতালেও গিয়ে উঠতে পারিনি। ফলে, গোটা অভিযোগটাই অবান্তর। আশা করি, তদন্ত করলে এই কথা সহজেই প্রমাণ হবে।' দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে আত্মপক্ষ সমর্থনে অরিত্র লিখেছেন, 'আমি নাকি এই ঘটনার পর থেকে পলাতক। এমনকি, কেউ কেউ লিখেছেন, লিখে চলেছেন, রাজ্যের শাসকদলের কোনও এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় আমি লুকিয়ে আছি। এই অভিযোগ অভাবনীয়। আমার ও আমার পরিবারের দিক থেকে দেখলে বীভৎসও বটে।'

আরও পড়ুন- শুভেন্দু’কে কলকাতা পুলিশের নোটিস! বিধানসভায় তুলকালাম বিজেপি’র

পাশাপাশি অরিত্র লিখেছেন, 'প্রশ্ন হল, আমি এতদিন কোথায় ছিলাম? ১০ আগস্ট, বৃহস্পতিবার, আমি রাজধানী এক্সপ্রেসে নয়া দিল্লির উদ্দেশ‍্যে রওনা দিয়েছিলাম। সেখান থেকে পরের দিন শ্রীনগরগামী ফ্লাইট ধরি। আমাদের গন্তব্য ছিল কাশ্মীর গ্রেট লেকস। এই ট্রেকে আমার সঙ্গে আরও অনেকেই ছিলেন। এবং, যাঁরা এই ট্রেকিং রুটের ব্যাপারে অবহিত, তাঁরা জানেন, এখানে নেটওয়ার্কের বালাই নেই। প্রায় চারমাস আগেই (২২ ও ২৩ এপ্রিল) টিকিট কাটা হয়েছিল ট্রেন ও ফ্লাইটের। সেসবও নেওয়া হয়েছিল যাওয়ার আগে। এই সব নথিই আপনাদের সামনে থাকল। কোনওদিন ভাবিওনি, এভাবে ব্যক্তিগত নথি ও প্রমাণ দেখিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে। সে যাহোক। ১০ আগস্ট, ট্রেন ধরার আগে, সকালে আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। যাঁরা সেই রাতের ঘটনার পরেই আমার ফেরার হওয়া নিয়ে প্রচার করছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে দেখাও হয়েছিল সেদিন। আমি ট্রেকে যাব, সে কথা আমার রিসার্চ গাইডকে আগেই জানিয়েছিলাম। তিনি সম্ভবত তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েওছেন। কোনও এক ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমার বাবাও একই কথা বলেছেন শুনলাম। আমার সতীর্থ ও বন্ধুরাও নানা জায়গায় এই কথা বলে থাকতে পারেন। কিন্তু, তারপরেও আমাকে নিয়ে ফেসবুকে ও মিডিয়ায় টানা পলাতক প্রচার চলেছে। আমার পরিচিত অনেকে এই কথা লিখে গেছেন প্রায় নিঃসঙ্কোচে। যেন তারা নিশ্চিত। একাধিক প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমার নাম ও ডাকনাম (আলু) ধরে বিচারসভা বসানো হয়েছে। একাধিক সাংবাদিক ফেসবুকের ব্যক্তিগত পোস্টেও এই মত প্রচার করেছেন। সব মিলিয়ে, একটা 'সত্য' গড়ে-পিটে নেওয়া হয়েছে-- আমি র‍্যাগিং ও ছাত্রমৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত। সেই রাতে প্রমাণ লোপাট করেছি এবং তারপর পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছি।'

'আলু'র অভিযোগ, 'যাঁরা এই কদিন ফেসবুকে ও মিডিয়ায় টক শো-তে আমাকে নিয়ে এই অভিযোগ ও প্রচারে অংশ নিলেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই আমি মিছিলে হেঁটেছি। কারও কারও সঙ্গে রাজনৈতিক মতান্তর থাকলেও একসঙ্গে হাতে-হাত ধরে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। কোভিডের সময় একে-অন্যের প্রয়োজনে রাজনৈতিক মতপার্থক্য মনেও রাখিনি। তাঁরা, এরপরেও এই প্রচারের অংশ হলেন। ফেসবুকে বা হোয়াটস্যাপে কীভাবে গুজব ও ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ে, তা শুনেছিলাম। কিন্তু, মিডিয়াও যে এভাবে অতি যত্নে, কাল্পনিক ভিলেন খাড়া করার জন্য এভাবে অসত্য খবর ছড়াতে পারে, তা ভাবিনি। হয়ত নিজের সঙ্গে এমনটা না ঘটলে বিশ্বাসও করতাম না। একজন ছাত্রের মৃত্যু গিলে নেওয়া যায় না। তার অভিঘাত মারাত্মক। এই ঘটনায় যুক্ত প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক, সেটা চাই। চাই, ঘটনার যথাযথ তদন্ত হোক।'

ব়্যাগিং বন্ধ না করতে পারার দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন 'আলু'। লিখেছেন, 'এই ঘটনায় বা সামগ্রিকভাবে র‍্যাগিং-এর সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত না থাকলেও মনে করি, আমার একজাতের ব্যর্থতা এখানে রয়েছে। ক্যাম্পাসকে র‍্যাগিং-মুক্ত রাখার নৈতিক ও রাজনৈতিক দায় আমারও ছিল। তা যে করতে পারিনি, সেটা স্পষ্ট। তাই, এই ঘটনার পরপরই সমষ্টিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এর দায় প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেওয়া উচিত। আমি যে রাজনৈতিক চলাচলের অংশ, সেখান থেকে এই মর্মে বয়ান পরে ফেসবুকে পোস্টও করা হয়। সেই লিখিত বয়ানে আমার নাম যুক্ত করার অনুমতি আমি আগেই দিয়ে রেখেছিলাম। কারণ, ওই পোস্ট যখন যাচ্ছে, ততক্ষণে আমি নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে চলে গেছি। ঐ পোস্টে ঘোষণাও করা হয়েছিল, ছাত্রছাত্রী সংসদের 'সভাপতি' পদ থেকে এতদ্দ্বারা আমি পদত‍্যাগ করছি।'

এই ঘটনায় তাঁর নাম জড়ানোয় তিনি মানসিকভাবে হতাশ বলে দাবি করেছেন অরিত্র মজুমদার। লিখেছেন, 'আইনী প্রক্রিয়ায় এর যথাসম্ভব বিহিত আমি চাইব নিশ্চয়ই। কিন্তু, গোটা প্রচারের বহর দেখে আমি ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছি। কতজনের বিরুদ্ধে, কতগুলো অংশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব! আইনি পথে যাই করি না কেন, এই গোটা ঘটনায় আমার ওপর দিয়ে যা গেল, যা যাচ্ছে, যে সম্মানহানির মুখোমুখি আমাকে হতে হচ্ছে-- তার সুরাহা হবে? সংবেদনশীল ও শুভানুধ্যায়ী মানুষদের কাছে বিনীত অনুরোধ, একটু ভেবে দেখবেন, এটা নির্যাতন নয়? যাহোক, যে-কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে আমি রাজি। কলকাতায় ফিরে আসছি। বাঁশদ্রোণীতে আমার ফ্ল‍্যাটেই আমাকে পাওয়া যাবে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে গোটা ঘটনার তদন্ত সুসম্পন্ন হোক। প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাক। যাদবপুর হোস্টেল ও ক্যাম্পাস র‍্যাগিং-মুক্ত হোক।'

kolkata police Jadavpur University
Advertisment