বিরোধীপক্ষের হাত থেকে খাসজমির দখল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছিল দুষ্কৃতীরা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালাল পুলিশ। পূর্ব বর্ধমানের শ্রীবাটি গ্রামে রাতভর অভিযানে উদ্ধার হল বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র। গ্রেফতার করা হয়েছে জামির আলি মণ্ডল, বজরুল শেখ ওরফে কালো শেখ এবং সইদুল শেখ ওরফে ফুটো নামে তিন দুষ্কৃতীকে। ধৃতদের বাড়িও শ্রীবাটি গ্রামেই। পুলিশের দাবি, ধৃতদের থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪টি রাইফেল, ২৪ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, একটি পিস্তল ও ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি এবং ১৬টি সকেট বোমা।
এই বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার দেখে চোখ কার্যত কপালে উঠে গিয়েছে পুলিশ কর্তাদের। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তিন ধৃতকেই রবিবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে পেশ করেন পুলিশকর্তারা। আরও আগ্নেআস্ত্র উদ্ধার এবং পলাতক দুস্কৃতীদের নাগাল পেতে তদন্তকারী অফিসার রবিবার ধৃতদের ১২ দিন পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানান। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, হেফাজতে নেওয়ার পর ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোথা থেকে এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এল, জিজ্ঞাসাবাদে সেকথা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, ধৃতরা আরও কোথাও অস্ত্র মজুত করে রেখেছে কি না, জেরায় তা-ও জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
উদ্ধার হওয়া সকেট বোমাগুলো নিস্ক্রিয় করার জন্য বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, শ্রীবাটি গ্রামের একটি খাস জমি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বজরুল শেখের সঙ্গে ওই গ্রামেরই অন্য একটি গোষ্ঠীর যুবকদের বেশ কিছুদিন ধরে বিবাদ চলছিল। বিবাদে কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। সেই কারণেই বজরুল শেখ তাঁর বিরোধী পক্ষের লোকেদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।
পরিকল্পনা মাফিক হামলার জন্য বোমা, বন্দুক-সহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র আগে থেকেই জোগাড় করে রাখা হয়েছিল। শনিবার গভীর রাতে গ্রামের এক জায়গায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছিল। কাটোয়া থানার পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালানোয় সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কয়েকদিন আগে বীরভূমের বগটুই গ্রামে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ পেয়ে রাজ্যজুড়ে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ জোর দিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। সেই সুবাদেই কাটোয়ার ঘটনাতেও দ্রুত পুলিশকর্মীরা সক্রিয় হওয়ায় বড় বিপদ এড়ানো গেল বলেই মনে করছেন শ্রীবাটি গ্রামের বাসিন্দারা।