Advertisment

বেআইনি অস্ত্রের ঘাঁটি এবার কলকাতার কাছেই

টিকিয়াপাড়ায় একটি বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা বিহারের মুঙ্গের এলাকার বাসিন্দা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
arms, অস্ত্র

উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

রাজ্যে আবারও বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ মিলল। কলকাতার অদূরে এবার হাওড়াতেই চলছিল বেআইনি অস্ত্র কারখানা। টিকিয়াপাড়ায় একটি ছোট একতলা বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা বিহারের মুঙ্গের এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনার আরেক অভিযুক্ত পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Advertisment

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে হাওড়া পুলিশের একটি দল টিকিয়াপাড়ার গঙ্গা বৈরাগী লেন এলাকায় হানা দেয়। লোকালয়ে একটি বাড়ির মধ্যেই বেআইনিভাবে চলছিল অস্ত্র কারখানা। প্রায় ৩০টি অসম্পূর্ণ পিস্তল, অস্ত্রশস্ত্র, মেশিন বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ধৃত মহম্মদ সোহেম আলম (৩৮), মহম্মদ আনোয়ার (৩৮), মহম্মদ নীরজ আনসারিকে (১৮) ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ধৃতদের জেরা করে এ ঘটনায় আর কারা জড়িত সে ব্যাপারে স্পষ্ট হওয়া যাবে বলে মত পুলিশের। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী ও অন্য উচ্চপদস্থ কর্তাদের সামনেই অভিযুক্তদের পাকড়াও করা হয় এদিন।

আরও পড়ুন: গোপন অস্ত্র তৈরির কারখানা: সুন্দরবনের কুলতলি যেন মিনি মুঙ্গের!

যে বাড়িটিতে বেআইনি ভাবে অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছিল, সেই বাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তিনি জানিয়েছেন, লোহা কাটার কাজ করবে বলে অভিযুক্তরা বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। পলাতক অভিযুক্তই বাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওই ঘরে কাজ করত অভিযুক্তরা। অস্ত্র তৈরি করে তা ভিনরাজ্যেও তারা পাঠাত বলে খবর। এদিকে, যদিও এলাকাটি যথেষ্ট অপরাধপ্রবণ, তবুও এ ঘটনা সামনে আসার পর উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, এর আগেও এ রাজ্যে বেশ কয়েকটি বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ মিলেছে। বর্ধমান, বীরভূম, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দুই ২৪ পরগণায় বিশেষত বেআইনি অস্ত্র কারখানার পর্দাফাঁস হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি হলো:

১ অগাস্ট: উত্তর ২৪ পরগণার জগদ্দলে বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ মেলে। পুলিশ ন'জনকে গ্রেফতার করে, অধিকাংশই বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা। আন্দাজ ৬০ টি অর্ধ-সমাপ্ত ইমপ্রোভাইজড অস্ত্র, একটি লেদ মেশিন, ড্রিলিং মেশিন, দুটি মিলিং মেশিন, এবং এক লক্ষ টাকার জাল নোট।

৯ অগাস্ট: স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ-এর একটি দল উত্তর ২৪ পরগণার আগরপাড়ায় একটি শাড়ির দোকানে হানা দিয়ে তার আড়ালে চলতে থাকা বেআইনি অস্ত্র কারখানা খুঁজে বের করে। এসটিএফ সূত্রে জানা যায়, কারখানাটি ৯ মিমি পিস্তলের ফ্রেম তৈরি করত, যেগুলি আবার পাচার হয়ে যেত কাকিনাড়ার আরেকটি বেআইনি অস্ত্র কারখানায়, যেখানে সম্পূর্ণ অস্ত্রটি তৈরি হতো। সেই অস্ত্র পাঠানো হতো মালদহের কালিয়াচকের মতো ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায়।

১৮ অগাস্ট: মালদহে একটি বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ পায় পুলিশ, এবং ২৪ টি অস্ত্র সমেত গ্রেফতার হয় দুজন। এই এলাকায় পাঁচ মাসের মধ্যে এই ধরনের এটি তৃতীয় ঘটনা ছিল।

৩০ জুলাই: ফের জগদ্দল। এসটিএফ-এর হাতে ছ'জন গ্রেফতার, মিষ্টির দোকানের পিছনে লুকিয়ে থাকা অস্ত্র কারখানা থেকে ২০ টি আংশিক তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত।

৩১ মে: মালদহ পুলিশ নলডুবি এলাকায় একটি আগ্নেয়াস্ত্র কারখানা থেকে ২২ টি অসম্পূর্ণ পিস্তল উদ্ধার করে, গ্রেফতার হয় দশজন।

জানুয়ারি ২০১৮: উত্তর ২৪ পরগণায় বেআইনি অস্ত্র কারখানায় রেইড, দুজন গ্রেফতার।

publive-image দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলির একটি বেআইনি অস্ত্র কারখানা থেকে নভেম্বর মাসে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র

প্রশাসনিক এক সূত্র মারফৎ জানা গেছে, আসন্ন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে বেআইনি অস্ত্রের চাহিদা তুঙ্গস্পর্শী হয়ে উঠবে। ওই সূত্রের কথায়, "বাংলার টালমাটাল অবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্ত্রের চাহিদা। আমাদের কাছে যা খবর, তাতে সবরকম অস্ত্রেরই বিরাট চাহিদা, বিশেষ করে পিস্তল, ছ-চেম্বারের ফায়ার আর্মস, কার্বাইন জাতীয় অস্ত্র। টাকা দিলে সবই পাওয়া যায়।"

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিহার থেকে বহু সংখ্যক অস্ত্র প্রস্তুতকারী পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় ঘাঁটি গাড়ছে। এর একটা বড়ো কারণ হলো, এরাজ্যে কোনোরকম 'ব্যাকগ্রাউন্ড চেক' যেহেতু করা হয় না, সেহেতু অনায়াসেই বেআইনি অস্ত্র এবং বিস্ফোরক তৈরির কারখানা চালানো সম্ভব। বাড়ির মালিকরা একাধিক ভাড়াটের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ভাড়া পেয়েই খুশি। "রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র বানানোর জন্য লেদ মেশিন বসানো হয়েছে। সবরকম রেটে বিহারের মুঙ্গের জেলা থেকে শ্রমিক পাওয়া যায়," ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান এক গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিক।

Read the full story in English

police kolkata news
Advertisment