কখনও চালের ওপর ফুটিয়ে তোলেন শহীদ ক্ষুদিরামের মুখ। আবার কখনও ভূট্টার দানায় অবলীলায় ফুটিয়ে তোলেন রবীন্দ্রনাথ, দেশলাই কাঠিতে ৪৭ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর চিত্র ফুটিয়ে আদায় করে নিয়েছেন কুর্নিশ। সৃষ্টির নেশা যেন তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। তিনি আর কেউ নন, মেদিনীপুরের দাসপুরের শিল্পী বিমান আদক।
Advertisment
মাইক্রো আর্টে বিমানের শিল্পকর্ম তাক লাগাতে বাধ্য। ১৫০ এর বেশি এইধরণের মাইক্রো আর্ট তৈরি করেছেন। কখনও তিনি সরষের দানায় তুলে ধরেন আস্ত এক পৃথিবী। আবার কখনও একটুকরো পাথরের ওপর তুলে ধরেন আস্ত এক বাংলার গ্রামকে। ছোট্ট ভুট্টাদানার মধ্যে ছবি ফুটিয়ে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুলেছেন। শুধু কী তাই! মিলেছে একের পর এক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তাঁর এই সৃষ্টি ইতিমধ্যেই চ্যাম্পিয়ন ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, এক্সক্লুসিভ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ জায়গা করে নিয়েছে। আর এই সম্মানই তার কাছে আগামীর অনুপ্রেরণা।
ছোট থেকেই আঁকার প্রতি অদম্য আগ্রহ। কল্পনাকে ফুটিয়ে তুলতে পারার মধ্যে যে তৃপ্তি রয়েছে তা ছোট থেকেই উপলব্ধি করেছেন তিনি। গ্রামেরই এক শিক্ষকের কাছে আঁকার হাতেখড়ি। ১২ বছরের বেশি সময় ধরে নিজের প্রচেষ্টা আর কল্পনাকে মিলে মিশে একাকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন একের পর এক চোখধাঁধানো শিল্পকর্ম। প্রয়াত সংগীতশিল্পী কেকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে ৭০ লিটার রং দিয়ে কেকে-র ৭০ ফুটের পোস্টার তৈরি করে সকলকে চমকে দিয়েছেন তিনি।
প্রকৃতি আর শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়ে মেলে ধরেছেন সৃষ্টিকে। কখনও তার জন্য সাবান, কখনও দেশলাই কাঠি, কখনও ভুট্টার দানা, কখনও সরষের দানা ব্যবহার করেছেন। স্বাধীনতার ৭৫ তম বছর উপলক্ষে দেশলাই কাঠিতে ৪৭ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর মুখ ফুটিয়ে তুলে তিনি চমকে দেন তামাম রাজ্যবাসীকে। সেই অর্থে নেই কোন প্রথাগত প্রশিক্ষণ, তাও তার সৃষ্টিতে বুঁদ সাত থেকে সাতাশি সকলেই। বর্তমানে গোটা ভারত জুড়ে প্রায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। তাদের নিয়েই সৃষ্টির নেশায় মেতে থাকেন বিমানবাবু।
ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কেউ যেমন রয়েছে বিশ্বভারতীতে তেমনই কেউ আবার দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মুম্বইয়ে। বিমানবাবুর একটাই আক্ষেপ, রাজ্যের বাইরে শিল্পীদের যথেষ্ট কদর থাকলেও এরাজ্যে তেমন কোন সম্মান মেলেনা। তবে তাতেও দমে থাকার পাত্র নন তিনি। শিল্প আর সৃষ্টির নেশায় আগামীতে আরও তাক লাগানো শিল্পকর্ম এনে সকলকেই চমকে দেবেন তিনি, আত্মবিশ্বাসী শিল্পী বিমান আদক।